সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় লাগা আগুন ৮ ঘণ্টায়ও নিয়ন্ত্রণে আসেনি। আগুন ছড়িয়ে পড়ছে বনের সমতল ভূমিতে। সন্ধ্যার পর বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিস নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে।
আগুন নেভাতে আগামীকাল মঙ্গলবার (৪ মে) সকালে আবারও অভিযান শুরু করবে ফায়ার সার্ভিস ও বন বিভাগ। তবে আগুন নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বন বিভাগ ও ফায়ার সার্ভিসের আলাদা বক্তব্য পাওয়া গেছে।
এদিকে আগুনের লাগার কারণ উদঘাটনে সোমবার (৩ মে) সন্ধ্যায় তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখেলা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক জয়নাল আবেদীনকে প্রধান করে এই কমিটি গঠন করা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শরণখেলা স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান ও ধানসাগর স্টেশন কর্মকর্তা মো. ফরিদুল ইসলাম।তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত দিনের মধ্যে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
বন বিভাগ বলছে, আগুন লাগার যায়গাটা বেশ দর্গম বনের মধ্যে সেখানে পৌঁছাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এলাকাবাসী ও বন বিভাগের ধারনা মৌয়ালদের ফেলে দেয়া আগুন থেকে এই আগুনের সূত্রপাত। এর আগে ৮ ফ্রেরুয়ারী বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর টহল ফাঁড়ির কাছে ২৭ নম্বর কর্ম্পাটমেন্টের বনে আগুন লেগে পুড়ে যায় প্রায় ৫ শতক বনের গাছপালা ও লতাগুল্ম। এই আগুন লাগার ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বন বিভাগ।
শরণখোলা উপজেলা সদর থেকে দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের মরা ভোলা নদী তীরবর্তী লোকজন জানায়, সোমবার বেলা সাড়ে এগারোটার দিকে তারা লোকালয় থেকে প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের দাসের ভারানি টহল ফাঁড়ির আওতাধীন এলাকায় আগুনের ধোয়া দেখতে পেয়ে বন বিভাগকে খবর দেন। এরপর বন বিভাগের শরণখোলা স্টেশন অফিস, মরাভোলা ও দাসের ভারানী টল ফাড়ির বনরক্ষীরা এবং দক্ষিণ রাজাপুর, মাঝেরচর ও রসুলপুর গ্রামের শতাধিক গ্রামবাসী আগুন নেভাতে ঘটনাস্থলে রওনা দেয়।
আগুন নেভানোর কাজে যোগ দেয়া দক্ষিণ রাজাপুর, মাঝেরচর ও রসুলপুর গ্রামের আফজাল চাপরাশি রেজাউল, সালাম ও সুমন বলেন, সুন্দরবনের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগার খবর পেয়ে আমরা শতাধিক গ্রামবাসী সেখানে ছুটে এসেছি। আমরা বাড়ি থেকে কলসি, বালতি, জগ ও হাড়ি নিয়ে পাশের ভোলা নদী থেকে পানি নিয়ে একদল গ্রাবাসী আগুন নিভাতে চেষ্টা চালাচ্ছি। অন্য একটি দল আগুন যাতে সুন্দরবনের সব দিয়ে ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য ফায়ার লাইন (আগুনের অংশের মাটি আলাদা করা) কাটার কাজ করছি।
তারা আরও জানান, মরা ভোলা নদী থেকে আগুন লাগার স্থানের দুরত্ব প্রায় এক কিলোমিটার। দূরে হওয়ায় পানি পেতে কষ্ট হচ্ছে। এখানে অন্য কোন পানির উৎস নেই। যার কারনে আগুন নেভাতে বেগ পেতে হচ্ছে। প্রায় পাঁচ একর এলাকায় আগুন ছড়িয়ে পড়েছে বলে তাদের ধারনা।
সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, সুন্দরবনের মধ্যে আগুন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সেখানে কিছু লতাপাতা পুড়েছে। বড় ধরনের ক্ষতি হয়নি। রাতের কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে পুনরায় আগুন পুরোপুরি নেভানোর কাজে বন কর্মী ও ফায়ার সার্ভিস অংশ নিবে।
এদিকে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন, বাগেরহাটের উপসহকারী পরিচালক মো. গোলাম সরোয়ার বলেন, লোকালয় থেকে প্রায় ৬ থেকে ৭ কিলোমিটার দূরে বনের মধ্যে এই আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ফলে আগুন নেভানোর জন্য আমাদের বেগ পেতে হচ্ছে। শুস্ক মৌসুমে গাছের পাতার স্তূপ থাকায় আগুন এক জায়গায় নেই। আগুন খুব দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে সমতল ভূমির বিভিন্ন স্থানে। যেখানে আগুন লেগেছে সেখানে আশেপাশে পানির কোনো উৎস নেই।
তিনি আরও বলেন, আগুন নিয়ন্ত্রণে পানি দেওয়ার জন্য সাড়ে চার কিলোমিটার পাইপ বসানো হয়েছে। রাত হওয়ার কারণে আমরা কার্যক্রম স্থগিত করেছি। মঙ্গলবার ভোর থেকে আমাদের তিনটি ইউনিট আবারও কাজ শুরু করা হবে। আশা করি মঙ্গলবার সম্পূর্ণরুপে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
সোমবার দুপুরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের দাসের ভারানি এলাকায় আগুন লাগে। পরবর্তীতে এলাকাবাসী ধোয়া দেখতে পেয়ে বন বিভাগকে অবহিত করে। এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি আগুন লেগে সুন্দরবনের অন্তত ৩ শতাংশ বন ভূমি পুড়ে যায়। এই নিয়ে গেল ২০ বছরে ২৫ বার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে সুন্দরবনে।
ভোরের পাতা/কে