প্রকাশ: শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২১, ৮:৪৬ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের সংরক্ষিত অভয়ারণ্যে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড কোকিলমনি’র বনে অবৈধ অনুপ্রেবেশ করে গোলপাতা ও জালানি কাঠ কাটার অভিযোগে পাঁচ মৌয়ালকে আটক করেছে বনরক্ষীরা। এই আটক অভিযানের সময় কোকিলমনি টহল ফাঁড়ির ফরেষ্টার আবুল হোসেনকে লাঞ্ছিত করে আরো একদল মৌয়াল নৌকা নিয়ে কোকিলমনি অভয়ারণ্যে গহীনে পালিয়ে গেছে।
সংরক্ষিত অভয়ারণ্যে অবৈধ অনুপ্রেবেশকারী আটক পাঁচ মৌয়ারা হলেন, শহিদুল হাওলাদার (৩৫), সলেমান হাওলাদার (৩০), রফিকুল গাজী (৪০), আফজাল (৪৫) ও রসুলপুর গ্রামের বেল্লাল (২৮)। তাদের সবার বাড়ী বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার সোনাতলা গ্রামে। শনিবার বিকালে আটক পাঁচ মৌয়ালদের নামে আইনে মামলা দিয়ে বাগেরহাট আদালতে পাঠালে বিচারক তাদের কারাগারে পাঠানোর নিদের্শ দেন।
সুন্দরবনের অপরাধ জগতের হালনাগাদ খোঁজ খবর রাখা একাধিক সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জে কর্মরর্ত বোর্ডম্যান মনির হোসেন ও ফরেষ্টগার্ড মিজানুর রহমানের অবৈধ কর্মকান্ডের কারনে শরণখোলা রেঞ্জের সংরক্ষিত অভয়ারণ্যে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডের প্রান- প্রকৃতি হুমকির মুখে পড়েছে। এই দুজনের দাদন দেয়া মৌয়াল, জেলে ও কাঠ পাচারকারীরা অবধৈ উপায়ে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইডে ঢুকে মৌয়াল, জেলে ও কাঠ ও গোলপাতা কাটে সাবাড় করছে। এই সিন্ডিকেটের পাঁচ মৌয়ালকে শুক্রবার দুপুরে কোকিলমনি টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীরা আটক করলেও এসময়ে ফরেষ্টার আবুল হোসেনকে লাঞ্ছিত করে আরো একদল মৌয়াল। এসময়ে পার্শ্ববর্তী ষ্টেশনের কোষ্টগার্ড সদস্যরা এগিয়ে এল নৌকা নিয়ে তারা অভয়ারণ্যে গহীনে পালিয়ে যায়। চাহিদা মতো মধু উৎকোচ না পেয়ে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে পাঁচ মৌয়ালকে আটকে রেখেছে বনরক্ষীরা। এরা হচ্ছে, এসময় বনরক্ষীদের কাছে মৌয়ালদের জমা রাখা ৫০ মন মধু, ৩০ হাজার টাকার নিত্য প্রয়োজীনীয় মালামাল ও নগদ এক লাখ ৫০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করে নেয় তারা। শুক্রবার বিকেলে শরণখোলা রেঞ্জের কোকিলমনি টহল ফাঁড়িতে এ ঘটনা ঘটে। ওইদিন রাতেই মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে নির্যাতনের শিকার মৌয়ালদের স্বজনরা শরণখোলা প্রেসক্লাবে এসে ঘটনা বর্ণনা করেন। তবে অভায়ারণ্যে প্রবেশ করে গোলপাতা ও জালানি কাটার অভিযোগে মৌয়ালদের আটক করা হয়েছে বলে বন বিভাগের দাবী।
এদিকে আটককৃতদের স্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, নাছিমা বেগম, তাসলিমা বেগম ও খাদিজা বেগম মৌয়ালদের বরাদ দিয়ে শরণখোলা প্রেসক্লাবে এসে সাংবাদিকদের জানান, তাদের স্বমীরা গত ১ এপ্রিল শরণখোলা ষ্টেশন থেকে ১৫ দিনের পারমিট নিয়ে সুন্দরবনে মধু আহরনে যায়। নিয়ম অনুযায়ী ১৫ এপ্রিল পারমিট নবায়নের জন্য ষ্টেশন থেকে বন বিভাগের একটি দল কোকিলমনি টহল ফাঁড়িতে যায়। প্রতিবছরের ন্যায় ওই টহল ফাঁড়িতে আগে থেকে মৌয়ালরা তাদের আহরিত মধু, নিত্য প্রয়োজনীয় মালামাল ও টাকা জমা রাখেন এবং পুকুর থেকে পানি নিয়ে যান তারা। সেজন্য কোকিলমনি টহল ফাঁড়ির বনরক্ষীদের এক কেজি করে মধু দিয়ে থাকেন মৌয়ালরা। কিন্তু এবারে মৌয়ালদের কাছে দুই কেজি করে মধু দাবী করে বনরক্ষীরা। এনিয়ে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি হলে পার্শ্ববর্তী ষ্টেশনের কোষ্টগার্ড সদস্যরা এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করে। পরে এই পাঁচ মৌয়ালকে মিথ্যা অভিযোগে আটক করা হয়। সংরক্ষিত অভয়ারণ্যে ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড কোকিলমনিতে মধুসহ সব ধরনের সম্পদ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় বন বিভাগের কে এসব মৌয়ালদের পাশ-পারমিট পারমিট নবায়ন করে শুক্রবার দুপুরে কোকিলমনি টহল ফাঁড়িতে গিয়েছিলো প্রশ্ন করা হলে আটক মৌয়ালদের স্ত্রীরা তার কোন উত্তর দেননি।
এব্যাপারে সুন্দরবন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) মো. জয়নাল আবেদীন বলেন, মৌয়ালরা অভয়ারণ্যে প্রবেশ করে গোলপাতা ও জালানি কাঠ কাটায় তাদেরকে আটক করে বন আইনে মামলা দেয়া হয়েছে।
ভোরের পাতা/পি