শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোনাম: দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫    মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির    মৎস খাতে বাংলাদেশকে ১৭২ কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে জাপান     আইসিসির এলিট প্যানেলে যুক্ত হলেন আম্পায়ার সৈকত    জেনে নিন আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস    শুক্রবার নাগাদ আসতে পারে ভারতের পেঁয়াজ    বিএনপি স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়: কাদের   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
করোনার আঁধার কেটে আলো আসবেই
#করোনায় ব্যতিক্রমধর্মী পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছি আমরা: গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার। #ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কেন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য থাকবে না? : এইচ রহমান মিলু। #আমরা আগামী বছর বৈশাখীর পূর্ণ উৎসব উদযাপন করব: স্নিগ্ধা বাউল।
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১৪ এপ্রিল, ২০২১, ১০:১৯ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

উৎসব প্রিয় বাঙালির মন আজ ভালো নেই। করোনা মহামারি আমাদের এক ঘরে করেছে। সেই যে এক বছর আগে মরণ থাবা বসিয়েছিল প্রাণঘাতী ভাইরাস কোভিড-১৯। বাংলা নববর্ষ আসলে কোনো একটা বিশেষ দিন নয়। এটি আমাদের সমস্ত ঐতিহ্য আর চর্চার জায়গায় এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। আমরা হতে পারি বিভিন্ন ধর্মের মানুষ কিন্তু সর্বপ্রথম আমরা হলাম বাঙালি।



দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ৩০৯তম পর্বে বুধবার (১৪ এপ্রিল) আলোচক হিসেবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন- বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সদস্য এবং মাননীয় সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, অপরাজেয় বাংলার সদস্য সচিব এইচ রহমান মিলু, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক স্নিগ্ধা বাউল। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ভোরের পাতার সিনিয়র রিপোর্টার উৎপল দাস।

গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার বলেন, আজ অনেক ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কথা বলতে হচ্ছে। আমাদের আইন অঙ্গনের অন্যতম নক্ষত্র সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির (বার অ্যাসোসিয়েশন) সভাপতি, সাবেক আইনমন্ত্রী ও কুমিল্লা-৫ আসনের সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু স্যার আমাদের মাঝে আর নেই। আমি মনে করি আজ আমাদের আইন অঙ্গন পরিবারের সবাই মর্মাহত। তাই অনেক মন খারাপ নিয়ে আজকের ভোরের পাতা লাইভে অংশগ্রহণ করতে হচ্ছে আমাকে। উৎসব প্রিয় বাঙালির মন ভালো নেই। করোনা মহামারি তাদের এক ঘরে করেছে। সেই যে এক বছর আগে মরণ থাবা বসিয়েছিল প্রাণঘাতী ভাইরাস কোভিড-১৯। এখন তা নানা মাত্রায় বেড়ে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। ‘এসো, এসো, এসো হে বৈশাখ।/তাপসনিশ্বাসবায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে,/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/যাক পুরাতন স্মৃতি, যাক ভুলে-যাওয়া গীতি,/ অশ্রুবাষ্প সুদূরে মিলাক/ মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা,/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা।’ অর্থাৎ ১৪২৮ বঙ্গাব্দে পুরাতন স্মৃতি মুছে যাক, দূরে চলে যাক ভুলে যাওয়া স্মৃতি, অশ্রুঝরার দিনও সুদূরে মিলাক। আমাদের জীবন থেকে বিগত বছরের ব্যর্থতার গ্লানি ও জরা মুছে যাক, ঘুচে যাক; নববর্ষে পুরাতন বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক। আমরা জানি, এ পর্যন্ত দেশে প্রায় ৭ লাখ মানুষের দেহে করোনার সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন প্রায় ১০ হাজার জন। ১২ ও ১৩ এপ্রিল মৃত্যুর হারও আগের তুলনায় অনেক বেশি। তবু করোনা মৃত্যু উপত্যকায় বৈশাখ এসেছে নতুন সাজে। ব্যতিক্রমধর্মী পহেলা বৈশাখ উদযাপন করেছি আমরা।

এইচ রহমান মিলু বলেন, শুরুতেই সঞ্চালকের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি, গত ডিসেম্বর মাসে আমরা ঢাবি উপাচার্য আখতারুজ্জামানের কাছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বঙ্গবন্ধুর একটি ভাস্কর্য স্থাপনের আর্জি জানাই। তিনি যখন এটার উত্তর দিচ্ছিলেন না তখন আমরা এবং মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ মিলে ১২ এপ্রিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাকিম চত্বরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১২ ফুট উচ্চতার একটি ভাস্কর্য স্থাপন করতে গিয়ে ঢাবি উপাচার্যের তীব্র বাধার মুখে পড়ি আমরা। ওই সময় প্রোক্টর সাহেব এবং তার সাথে আসা প্রোক্টরিয়াল টীম এসে আমাদের বাধা প্রধান করে এবং অনুরোধ করেন ভিসি স্যারের সাথে কথা বলে এটা করার জন্য। সেদিন আমরা প্রোক্টর স্যারের প্রতি সম্মান রেখে আমরা সেদিন ভিসি স্যারের সাথে দেখা করতে যাই এবং সেদিন তিনি আমাদের একেবারে পরিষ্কার কোনো কিছু বলেননি। তাকে আমরা সেদিন বলি, বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা, এই বাংলাদেশের প্রতিটা ইঞ্চি তার, সেহেতু এখানে কোনো ভাস্কর্য বসাতে কারও অনুমতি লাগবে না। তখন তিনি আমাদের সেদিন নানাভাবে বুঝিয়েছিলেন। তারপরে তাকে আমরা এই আল্টিমেটামও দিয়ে আসি যে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর পূর্বে যদি ঢাবি কর্তৃপক্ষ বঙ্গবন্ধুর কোন ভাস্কর্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপন না করে এবং আমাদেরকেও ভাস্কর্য স্থাপনের অনুমতি না দেয় তবে আমরা অনুমতি ছাড়াই আমাদের পছন্দমত জায়গায় নিজস্ব অর্থায়নে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ঢাবিতে স্থাপন করব। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সেদিন বঙ্গবন্ধুর ১২ ফুট উচ্চতার একটি অত্যন্ত সুন্দর ভাস্কর্য একটা সুন্দর জায়গায় স্থাপন করতে যায় তখন ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের প্রশাসন থেকে এসে আমাদের বাধা সৃষ্টি করা হয়। তারা সেখানে সরাসরি না এসে সেদিন আমাদের ঠেকাতে পুলিশ পাঠায়। অত্যন্ত নোংরা একটি কাজ করেছিল সেদিন তারা। আমার কথা হল যে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ এর কারণে আজ আপনার মতো একজন লোক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হয়েছেন, সেই বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রতি আপনার এতো অশ্রদ্ধা কেন? তার ভাস্কর্য স্থাপনে আপনাদের এত এলার্জি কোথা থেকে এলো। যখন বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি মাটিতে দাঁড়িয়েছিলো এবং মূল বেদী নির্মাণের কাজটি উপাচার্যের পাঠানো পুলিশ বাহিনী বন্ধ করতে আমাদের সাথে বিতণ্ডায় লিপ্ত ছিলো, সেই সময়ে ৮-১০ বছরের একটি শিশু মাটিতে দাঁড়ানো বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের প্রতি গভীর ভালোবাসা নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়েছিলো এবং অল্প পরেই আশে পাশের একটি গাছ থেকে কিছু ফুল এনে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের পায়ে রেখে দিলো। আমার চোখ তখন জলে ভরে গেলো, মনে হলো সকল শ্রম ও অর্থ ব্যয় আমাদের সার্থক হলো। সে একটা অদ্ভুত একটা দৃশ্য আপনারা যদি দেখতেন তাহলে বুঝতে পারতেন যে, সেই ছোট্ট শিশুটি তার হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সাথে কানেক্ট হতে চেয়েছিল। তো তারা সেদিন কি করলো, এই যে এই প্রজন্ম যারা বঙ্গবন্ধুকে জানতে চায়, তার সম্বন্ধে জানতে চায় তাদেরকে তার কাছে যেতে দিলো না।

স্নিগ্ধা বাউল বলেন, আসলে বাংলা নববর্ষ আসলে কোন একটা বিশেষ দিন নয়। এটি আমাদের সমস্ত ঐতিহ্য আর চর্চার জায়গায় এসে আমরা দাঁড়িয়েছি। আমরা হতে পারি বিভিন্ন ধর্মের মানুষ কিন্তু সর্বপ্রথম আমরা হলাম বাঙালি। আমাদের সে যোগ্য সূত্রতা সেটি হচ্ছে আমাদের বাংলা নববর্ষ। আসলে আমাদের এবারের নববর্ষে তেমন কিছুই হয়নি। জীবন বাঁচাতে যেমন জীবিকাকে বিসর্জন দিতে হচ্ছে তেমনি উৎসবের আনুষ্ঠানিকতাগুলোও দিতে হচ্ছে বাদ। জীবন থেমে থাকবে না। করোনাকালের মহাসংকট কাটিয়ে নিশ্চয়ই আবার জমবে মেলা, বটতলা হাটখোলা। কেননা বাংলা নববর্ষ অসুর দূর করে সুর সঙ্গীতের, মেলা ও মিলনের আনন্দ ও উৎসবের, সাহস ও সংকল্পের। দুঃখগ্লানি, অতীতের ব্যর্থতা পেছনে ফেলে তাই এগিয়ে যাওয়ার শপথ নেওয়ার দিনও পহেলা বৈশাখ। দেশের কল্যাণে সকলেই এক কাতারে শামিল হয়ে এগিয়ে যাওয়ার অগ্নিশপথ নেওয়ার দিনও এটি। মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা আছি ঘরের মধ্যে। মরণঘাতী ভাইরাসের সামনে দাঁড়িয়ে তবু আমরা সাহস নিয়ে বলে যাচ্ছি পুরাতন বর্ষের বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে ক্ষমা করো পুরাতন সব অপরাধ। নববর্ষের সকল আনন্দ, উৎসব ও অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা স্মরণ করেও আমরা আজ বলতে বাধ্য হচ্ছি, করোনা আক্রান্ত বিশ্বে আমাদের কাছে এখন বেঁচে থাকার গৌরব অত্যন্ত বেশি। আমরা এখন বেঁচে থাকার জন্য নতুন সংকল্প অন্তরে লালন করছি। বছরের পর বছর ধরে আমরা বর্ষবরণের উৎসবে গাই, ‘মুছে যাক গ্লানি/ঘুচে যাক জরা/অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’।বৈশাখের তাপে সব রোগ জরা ঘুচে পৃথিবী শান্ত হোক। মুমূর্ষুরে উড়ায়ে দিও না, স্রষ্টা, তাদেরকে সুস্থ করে দাও, বাঁচিয়ে রাখো প্রিয়জনের মাঝে। এসো হে বৈশাখ, এসো, এসো। আগামী বছর হয়তো আমাদের উৎসব আর আনন্দমুখর হবে। সে পর্যন্ত ১৪২৮ সবার জন্য মঙ্গলময় হোক।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  ভোরের পাতা সংলাপ   করোনা  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]