রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার এখন উত্তপ্ত। রোজায় যেসব পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে বাজারে সেগুলোর পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
তারপরও রমজান মাস শুরু হওয়ার আগেই আরেক দফা বাড়লো অধিকাংশ পণ্যের দাম। যদিও দুই মাস আগে থেকে রোজানির্ভর পণ্যসহ প্রায় সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়তে শুরু করেছে।
রাজধানীর তুরাগ এলাকায় ছোট্ট দুই রুমের টিনশেড বাসায় ছয় সদস্যের পরিবার নিয়ে ভাড়া থাকেন গার্মেন্টকর্মী ফরহাদ হোসেন। ভাড়া দেন ৬ হাজার ৫০০ টাকা। পরিবারের তিন জন উপার্জনক্ষম ব্যক্তির মধ্যে তার দুই ছেলের চাকরি নেই ছয় মাস হলো। করোনার কারণে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ায় তারা যে সোয়েটার কারখানায় কাজ করতেন সেটিও এখন বন্ধ। এখন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি নিজেই। তার আয়েই কোনোমতে চলছে সংসার। এ অবস্থায় দফায় দফায় চাল, ডাল, তেলসহ সব নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে তাতে সংসার চালাবেন কীভাবে?—এ চিন্তা এখন তার কাছে রীতিমতো ‘আতঙ্কে’ পরিণত হয়েছে বলে জানান তিনি। ফরহাদ হোসেনের মতো স্বল্প আয়ের মানুষদের এখন এমনই অবস্থা। আর এর মধ্যেই চলতি সপ্তাহে শুরু হচ্ছে রমজান।
গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বাজারগুলোতে চাল, সয়াবিন তেল, দেশি-বিদেশি পেঁয়াজ, দেশি রসুন, আদা, মসুর ডাল এবং শুকনা মরিচের দাম বেড়েছে। বিপরীতে পাম অয়েল, ছোলা, হলুদ, খেজুর, ব্রয়লার মুরগির দাম কমেছে।
সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বংলাদেশ’র (টিসিবি) প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
রাজধানীর শাহজাহানপুর, মালিবাগ, কারওয়ানবাজার, বাদামতলী, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, কচুক্ষেত, মৌলভী বাজার, মহাখালী, উত্তরা আজমপুর, রহমতগঞ্জ, রামপুরা এবং মিরপুর-১ নম্বর বাজারের পণ্যের দামের তথ্য নিয়ে এ প্রতিবেদন তৈরি করেছে টিসিবি।
প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম গত এক সপ্তাহে বেড়েছে দশমিক ৭৯ শতাংশ। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল এখন বিক্রি হচ্ছে ৬৩০ থেকে ৬৫০ টাকায়।
পাশাপাশি বেড়েছে খোলা সয়াবিন তেলের দামও। গত এক সপ্তাহে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ২৪ শতাংশ। বর্তমানে খোলা সয়াবিন তেলের লিটার বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১২৫ টাকায়।
তবে পাম অয়েলের দাম কমেছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, সপ্তাহের ব্যবধানে খোলা পাম অয়েলের দাম দশমিক ৯২ শতাংশ কমে ১০৬ থেকে ১১০ টাকা এবং সুপার পাম অয়েলের দাম ২ দশমিক ২১ শতাংশ কমে ১০৯ থেকে ১১২ টাকা লিটার বিক্রি হচ্ছে।
টিসিবি বলছে, সপ্তাহের ব্যবধানে সরু চালের দাম ১ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। মাঝারি মানের পাইজাম চালের দাম ৩ দশমিক ৭০ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬০ টাকায়। আর মোটা চালের দাম ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে ৪৬ থেকে ৫২ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
দামবৃদ্ধির তালিকায় থাকা মাঝারি মানের মসুর ডাল সপ্তাহের ব্যবধানে ৬ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। দেশি আদার দাম ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ বেড়ে কেজি ১০০ থেকে ১২০ টাকা হয়ে গেছে। আমদানি করা আদার দাম ১৮ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১৬০ টাকায়। আমদানি করা শুকনা মরিচের দাম ১ দশমিক ৯৬ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ থেকে ৩০০ টাকায়।
টিসিবি আরও জানিয়েছে, গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম ১৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৩ দশমিক ১৭ শতাংশ। বাজারে বিদেশি পেঁয়াজের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। দেশি রসুনের দাম ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৯০ টাকায়।
বৃদ্ধির তালিকায় আরও রয়েছে দারচিনি এবং গুড়ো দুধের দাম। দারচিনির দাম গত এক সপ্তাহে ৬ দশমিক ১৭ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৮০ থেকে ৪৮০ টাকায়। ডানো ব্র্যান্ডের গুড়ো দুধের দাম ১ দশমিক ৬১ শতাংশ বেড়ে কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬১০ থেকে ৬৫০ টাকায়।
তবে ডানো গুড়ো দুধের দাম বাড়লেও ডিপ্লোমা ও মার্কস ব্র্যান্ডের গুড়ো দুধের দাম কমেছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, ডিপ্লোমা দুধের দাম এক সপ্তাহে ৩ দশমিক ১০ শতাংশ কমে ৬১০ থেকে ৬৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। মার্কস দুধের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৪০ থেকে ৫৭০ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে এই গুড়ো দুধের দাম বেড়েছে ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ।
দাম কমার তালিকায় রয়েছে রমজানের অত্যাবশকীয় পণ্য খেজুর। সপ্তাহের ব্যবধানে সাধারণ মানের খেজুরের দাম ১৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছে টিসিবি। প্রতিষ্ঠানটির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বাজারে খেজুরের কেজি ১৫০ থেকে ৩৫০ টাকার মধ্যে।
দাম কমার তালিকায় রমজানের আরেক অত্যাবশকীয় পণ্য ছোলা। সপ্তাহের ব্যবধানে ছোলার দাম ১০ শতাংশ কমে কেজি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ তালিকায় থাকা প্যাকেট আটার দাম সপ্তাহের ব্যবধানে ১ দশমিক ৪৭ শতাংশ কমে ৩২ থেকে ৩৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছে টিসিবি।
টিসিবি আরও জানিয়েছে, আমদানি করা হলুদের কেজি এখন ১৪০ থেকে ১৮০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এই পণ্যটির দাম কমেছে ৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। লবঙ্গের দাম ৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ কমে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। ব্রয়লার মুরগির কেজি ৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ কমে প্রতিকেজি ১৪৫ থেকে ১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ভোরের পাতা/কে