শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪ ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিরোনাম: দক্ষিণ আফ্রিকায় বাস খাদে পড়ে নিহত ৪৫    মুক্তিযুদ্ধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির চেতনা তৃণমূলে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান রাষ্ট্রপতির    মৎস খাতে বাংলাদেশকে ১৭২ কোটি টাকার অনুদান দিচ্ছে জাপান     আইসিসির এলিট প্যানেলে যুক্ত হলেন আম্পায়ার সৈকত    জেনে নিন আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাস    শুক্রবার নাগাদ আসতে পারে ভারতের পেঁয়াজ    বিএনপি স্বাধীনতার মর্মার্থকে অকার্যকর করতে চায়: কাদের   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
জাতীয় পতাকা দিবস আজ
সবুজ জমিনের লাল বৃত্তে মানচিত্র খচিত পতাকা উড়ে স্পর্ধায়
বিপুল হাসান
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২ মার্চ, ২০২১, ২:২৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ

একাত্তরের মার্চ মাস ছিলো আন্দোলন-সংগ্রামে উত্তাল, উত্তেজনায় ভরপুর। ক্ষণে ক্ষণে বদলে যাচ্ছিল দৃশ্যপট। একদিকে নির্বাচনে জিতে আসা আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরে পাকিস্তানী সামরিক জান্তার গড়িমসি, অন্যদিকে বঙ্গবন্ধুর ডাকে দেশব্যাপী প্রতিরোধ-সংগ্রাম।  পাকিস্তানি সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার লড়াইয়ে এক নতুন মাত্রা সংযোজিত হয়েছিল  ২ মার্চে।  একাত্তরের এই দিনে  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় আয়োজিত এক ছাত্র সমাবেশে তৎকালীন ডাকসুর ভিপি (সহসভাপতি) আ স ম আবদুর রব সর্বপ্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর থেকে দিনটি জাতীয় পতাকা দিবস হিসেবে পালিত হয়েছে আসছে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উপস্থিতিতে  ৩ মার্চ পল্টন ময়দানে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের জনসভায় স্বাধীন বাংলাদেশের এই পতাকাটি  উত্তোলন করেন তৎকালীন মোহাম্মদ শাজাহান সিরাজ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম নিজ হাতে ধানমন্ডিতে তার নিজ বাসভবনে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেছিলেন ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ। বিদেশের মাটিতে সর্বপ্রথম অর্থাৎ ভারতের কলকাতায় বাংলাদেশ মিশনে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১৮ এপ্রিল।

স্বাধীন বাংলাদেশের জাতীয় পতাকাটি প্রথমে  ছিল সবুজ জমিনের ওপর লাল বৃত্তের মাঝখানে সোনালি মানচিত্র খচিত। এ পতাকার নকশা করেছিলেন ছাত্রনেতা শিবনারায়ণ দাশ। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই পতাকাটি দেখা গেছে মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে। পরে ১৯৭২ সালে শিল্পী কামরুল হাসানকে জাতীয় পতাকাকে সার্বজনীন করে তোলার দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি পতাকাটিতে সংস্কার আনেন। শিবনারায়ণ দাশের আঁকা মানচিত্র-সংবলিত পতাকা থেকে মানচিত্র বাদ দিয়ে কামরুল হাসান যে পতাকাটির ডিজাইন করেন, সেটিই এখন আমাদের জাতীয় পতাকা।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় ২৩ বছর পর ১৯৭০ সালে। সেই নির্বাচনের ফলাফল ছিল আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ছয় দফা কর্মসূচির প্রতি জনগণের সমর্থন। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগেরই  সরকার গঠনের কথা ছিল। ডিসেম্বরে নির্বাচন হওয়ায় জানুয়ারিতেই জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসতে পারত, কিন্তু সরকার ও পিপলস পার্টি-মুসলিম লীগ ষড়যন্ত্র করে পিছিয়ে দেয়। ৩ মার্চ অধিবেশন আহ্বান করা হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ তাতে আপত্তি করেনি, বরং অধিবেশনে যোগ দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু পশ্চিম পকিস্তানের সামরিক জান্তা পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিতে রাজি নয়। এটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে  ১ মার্চ পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিতের ঘোষণায়। 

এই ঘোষণা যখন রেডিওতে প্রচার করা হল, তখন ঢাকা স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের সঙ্গে কমনওয়েলথ একাদশের খেলা চলছিল। মুহূর্তেই জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। ঢাকা স্টেডিয়াম হয়ে ওঠে এক যুদ্ধক্ষেত্র। বন্ধ হয়ে যায় স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, দোকান-পাট সবকিছু। রাস্তায় নেমে আসে লাখ লাখ মুক্তিকামী মানুষ। দেখতে দেখতে পুরো শহর পরিণত হয় একটি মিছিলের নগরীতে। মিছিলে অংশ নেয়া মানুষের মুখে তখন স্বাধীনতার স্লোগান: ‘জয় বাংলা’, ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধর, বাংলাদেশ স্বাধীন কর।’

আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের আহবান জানাতে পাকিস্তানি সামরিক সরকারের টালবাহানায় পরিস্থিতি ছিল উত্তপ্ত,  এই অবস্থায়  জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বসার ৪৮ ঘণ্টা আগে তা অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করায় বাংলার মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে বিক্ষোভে ফেটে পড়ে। গণতান্ত্রিক পন্থায় প্রতিবাদ হিসেবে বঙ্গবন্ধু ২ মার্চ ঢাকায় বেলা দুইটা পর্যন্ত এবং ৩ মার্চ সারা দেশে পূর্ণ দিবস হরতাল আহ্বান করেন। অন্যান্য প্রগতিশীল রাজনৈতিক ছাত্র–শ্রমিক সংগঠন হরতালে সমর্থন দেয়। অধিবেশন বসার তারিখ ৩ মার্চ ‘জাতীয় শোক দিবস’ ঘোষণা করা হয়। সেদিন ছাত্রলীগ আয়োজিত পল্টনের জনসভায় বঙ্গবন্ধু ভাষণ দেন এবং বলেন, ৭ মার্চ তিনি রেসকোর্স ময়দানে পরবর্তী কর্মসূচির ঘোষণা দেবেন।



একাত্তরের ২ মার্চ বিভিন্ন পত্রিকা ও বার্তা সংস্থার কাছে পাঠানো বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত সারা দেশে ৬টা-২টা পর্যন্ত হরতাল পালিত হবে। সরকারি অফিস, সচিবালয়, হাইকোর্ট, স্বায়ত্তশাসিত করপোরেশন, পিআইএ, রেলওয়ে, সড়ক ও নৌযান, মিল-কারখানা, বাণিজ্যপ্রতিষ্ঠান, হাটবাজার প্রভৃতি বন্ধ থাকবে। শুধু চালু থাকবে অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদপত্রের গাড়ি, হাসপাতাল, ওষুধের দোকান, বিদ্যুৎ ও ওয়াসার কর্মীদের গাড়ি। অর্থাৎ শান্তিপূর্ণভাবে সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতার ডাক দেন বঙ্গবন্ধু। 

বাঙালির স্বাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে নির্বাচিত নেতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে যে অসহযোগ আন্দোলন শুরু হয়, তা কোনো একক দলের আন্দোলন ছিল না। তা ছিল দল–মতনির্বিশেষে সর্বাত্মক জনযুদ্ধের প্রস্তুতি। মুসলিম লীগ, জামায়াতে ইসলামী এবং নেজামে ইসলামের মতো গণবিচ্ছিন্ন ও পাকিস্তানবাদী দল ছাড়া সব রাজনৈতিক দল ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রেণি–পেশার মানুষ তাতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে।  

পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার প্রতিরোধ সংগ্রামে একাত্তরের ২ মার্চ আলাদা গুরুত্ব বহন করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে  তৎকালীন ডাকসু নেতাদের উদ্যোগে  সেদিনের পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়েই বাঙালি ছাত্র-জনতা স্বাধীনতা সংগ্রামের অগ্নিমন্ত্রে উজ্জীবিত হয় এবং স্বাধীনতা অর্জনের পথে যাত্রা শুরু করে। পতাকা উত্তোলনই আমজনতাকে জানিয়ে দেয় স্বাধীন বাংলাদেশের বিকল্প নেই। একই এইদিনই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান ঘোষণা করেন অসহযোগ আন্দোলনের কর্মসূচি। অচল হয়ে যায় দেশ, কার্যত পূর্ব পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ বঙ্গবন্ধুর হাতে চলে আসে। আমাদের মুক্তি সংগ্রামের পটভূমি তৈরিতে এই অসহযোগ আন্দোলন পালন করে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

ভোরের পাতা- এনই

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »


আরও সংবাদ   বিষয়:  জাতীয় পতাকা দিবস   জাতীয় পতাকা   বিপুল হাসান  







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]