প্রকাশ: বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ২:২১ এএম | অনলাইন সংস্করণ
শিক্ষার্থীদের দাবি বিবেচনায় নেওয়া উচিত
শাস্ত্রে বলা আছে ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ’ অর্থাৎ ছাত্রদের মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত কেবলই লেখাপড়া করা। সেই লেখাপড়া অব্যাহত রাখতেই তৈরি হয়েছে বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়, বিশ^বিদ্যালয়সহ বহুবিধ প্রতিষ্ঠান। আগের দিনে টোলে শিক্ষাদান কার্যক্রম পরিচালনা করা হতো। আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় সেই অবস্থার উন্নতি ঘটেছে।
এখন বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেতে হোস্টেল হল প্রভৃতি তৈরি হয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থীরা অবস্থান করে নিজেদেরকে শিক্ষায় আলোকিত করার সুযোগ পান। বিশ্বের সব দেশের মত বাংলাদেশেও এই সুবিধা রয়েছে। বিশেষ করে উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রে হল একটি দৃষ্টান্তমূলক উপকরণ। বর্তমানে সেই সব হল এবং হোস্টেল বন্ধ রয়েছে। কেন বন্ধ তার কারণও কারো অজানা নয়। মহামারি করোনা থেকে দেশের শিক্ষার্থীদের নিরাপদে রাখতে সরকার এই ব্যবস্থা গ্রহণে বাধ্য হয়েছেন। চলমান সংকটটি এরই মধ্যে বছর পেরোতে চলেছে। শাস্ত্রের সেই কথানুযায়ী শিক্ষার্থীরা এই সংকটময় কালে লেখাপড়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন।
আবার সংকটের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বহে চলেছে সময়। সময়ের দিকে তাকালে অবশ্যই একটি হতাশা তাদের ভেতরে কাজ করছে। তাই হয়তো ছাত্ররা তাদের লেখাপড়ার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে এখন সোচ্চার হয়েছেন। একটি বছর পেরিয়ে যাওয়া মানেই ছাত্রদের বয়স যেমন চলে যাচ্ছে, তেমনি তাদের অভিভাবকদের উপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের দেশে যারা উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করছেন তাদের অভিভাবকদের বেশিরভাগই গ্রামে বসবাস করেন। নিজেদের সব সম্বল বিক্রি করে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ যুগিয়ে চলেন। প্রত্যাশা সন্তান লেখাপড়া শিখে চাকরি-বাকরি করে সংসারের হাল ফেরাবেন। সেখানে শিক্ষা ছাড়াই যদি একটি বছর অতিক্রান্ত হয় তাহলে সেটি অবশ্যই হতাশার। যদিও বর্তমানের অচলাবস্থার জন্য একক কোন দেশ বা সরকার দায়ী নন। এটি বিশ্ব সংকট একটি বৈশ্বিক সমস্যা।
দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা টানা এক বছর ধরে ক্যাম্পাসের বাইরে রয়েছেন। হঠাৎ করেই মহামারি করোনার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সকলের স্বাস্থ্য বিবেচনায় এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হন। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে হয়। এসময় বিপাকে পড়েন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে আসা শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন অনেক শিক্ষার্থী রয়েছেন যাদের নিজের আয়ের উপর নির্ভর করে শিক্ষা জীবন চালিয়ে নিতে হয়। তাদের জন্য হল ত্যাগ অনেকটাই দুর্ভোগ বয়ে আনে। করোনার কারণে হল বন্ধ থাকায় অনেক শিক্ষার্থীকে বাড়িতে যেমন চলে যেতে হয়েছে, অন্যদিকে অনেক শিক্ষার্থী মেস ভাড়া করে প্রাইভেট পড়ানোসহ পার্টটাইম চাকরিও করছেন।
এসব ক্ষেত্রে তারা নানান সংকটের মুখোমুখি হয়েছেন। করোনার প্রথম দিকে অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের জন্য গৃহশিক্ষক রাখেননি। বেশ কিছুদিন পরে অবশ্য সেই সব অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সুশিক্ষার জন্য গৃহশিক্ষক রাখতে বাধ্য হন। এই সব গৃহ শিক্ষদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ হচ্ছে হলের ছাত্র বিধায় হল বন্ধ থাকাটা তাদেরকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। তাই হল খুলে দেওয়ার দাবিতে অনেকটাই সোচ্চার হয়ে উঠেছেন হলের স্থায়ী শিক্ষার্থীরা। যার প্রথম প্রকাশ ঘটে দেশের আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় নামে খ্যাত জাহাঙ্গীরনগর পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়ে। এসময় শিক্ষার্থীরা অনেকটাই জোর করে হলে উঠে পড়েন। যদিও তাদেরকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি শিক্ষার্থীদের সেই বাধা অপসারণে সহায়তা করে। এরপর দেশের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয় ঢাবিতে শিক্ষার্থীরা একই পথ অনুসরণ করেন। সেখানেও সাময়িক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলেও কর্তৃপক্ষের সময়োপযোগী পদক্ষেপের কারণে বিষয়টি বেশিদূর গড়ায়নি।
আমরা মনে করি এই মুহূর্তে শিক্ষার্থীরা তাদের হলে অবস্থানের যে দাবি করছে সেটিকে উপেক্ষা করা ঠিক নয়। কারণ, করোনায় তাদের লেখাপড়া অনেকটাই পিছিয়েছে। নিজেদের পরীক্ষা নিয়েও তাদের ভেতরে একধরনের শঙ্কা কাজ করছে। এছাড়া নিজেদের ভবিষৎ নিয়েও তারা উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন। সেই সময়ে হল বিষয়ে কোন ধরনের অরাজকতা কোনভাবেই কাম্য হতে পারে না। এক্ষেত্রে ছাত্রদের দাবি বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। তারা যদি নিজেদের সুরক্ষিত রেখে হলে অবস্থান নিয়ে নিজেদের লেখাপড়ার পরিবেশ নিশ্চিত করতে সক্ষম হন, তাতে আপত্তির কিছু আছে বলে আমরা মনে করি না। এবিষয়ে সরকারকে আরো গভীরভাবে ভেবে দেখার প্রয়োজন রয়েছে।
যদিও আমাদের দেশের শিক্ষামন্ত্রী গত সোমবার মে মাসে সব হল খুলে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। যদি সেই সময়টা এগিয়ে এনে ছাত্রদের এই সময়ে হল খুলে দেওয়া যায় তাতে আমরা আপত্তির কিছু দেখছি না। বরং সরকার যদি শিক্ষার্থীদের বিষয়ে বিবেচনা করে তাদের সিদ্ধান্ত একটু এগিয়ে আনেন তাতে আখেরে লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। এর মাধ্যমে দু’পক্ষের ভেতরে সর্ম্পকের বাতাবরণ তৈরি হতে পারে। যেখানে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধানের ইঙ্গিত রয়েছে। আমরা মনে করি সরকার এই বিষয়ে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। ছাত্র তথা শিক্ষার্থীদের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে হল খোলার বিষয়ে সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা বিশ্বাস করি। করোনার কারণে এখন দেশের সব কিছুই লন্ডভন্ড। সেখানে নতুন করে কোন সমস্যা সৃষ্টি হওয়া মানেই সরকারের পক্ষে একধরনের চাপ অনুভূত হওয়া। ছাত্ররা জাতির ভবিষৎ বিধায় সরকার নিশ্চয়ই বিষয়টি বাস্তবতার নিরিখে ভেবে দেখবেন। ছাত্রদের এই দাবি মেনে নেওয়া মানেই দেশের শিক্ষাকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্র তৈরি হওয়া। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস সরকার বিষয়টি অত্যন্ত সহনাভূতির সঙ্গে বিবেচনা করবেন। সারা জাতি সরকারের কাছে সেটাই প্রত্যাশা করে।