বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের জন্য যে স্বপ্ন দেখেছিলেন এটা কিন্তু সেই ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় দেখেছিলেন। বাঙালিদের মুক্তির জন্য যে চেতনা তার মধ্যে তৈরি করেছিলেন সেটা তিনি সে সময় প্রতিটি বাঙালিদের বুকের মধ্যে ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অভিযুক্ত অন্যান্যদের সাথে আগরতলা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে মুক্তি লাভ করেন। পরের দিন ২৩ তারিখ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাঁর সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভার আয়োজন করে। প্রায় ১০ লাখ মানুষের সেই সম্মেলনে আমাদের জাতির পিতা ও বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধি প্রদান করা হয়।
দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপের ২৫৯তম পর্বে মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) আলোচক হিসাবে উপস্থিত হয়ে এসব কথা বলেন পিএসসি, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, গবেষক ও লেখক মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার, নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও সামরিক গবেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ, অস্ট্রেলিয়ার সাধারণ সম্পাদক, মাসিক মুক্তমঞ্চের নির্বাহী সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল নোমান শামীম। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
মেজর জেনারেল (অব.) এ কে মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, আজ ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘বঙ্গবন্ধু’ দিবস। ১৯৬৯ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অভিযুক্ত অন্যান্যদের সাথে আগরতলা মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়ে মুক্তি লাভ করেন। পরের দিন ২৩ তারিখ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাঁর সম্মানে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক জনসভার আয়োজন করে। প্রায় ১০ লাখ মানুষের সেই সম্মেলনে আমাদের জাতির পিতা ও বাংলাদেশের স্থপতি শেখ মুজিবুর রহমানকে "বঙ্গবন্ধু" উপাধি প্রদান করা হয়। ওই সভায় রাখা বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এগার দফা দাবির পক্ষে তার পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করেন। যে নেতা তার জীবনের যৌবন কাটিয়েছেন পাকিস্তানের কারাগারে, ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন সেই নেতাকে কৃতজ্ঞ বাঙালি জাতির পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞচিত্তে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করা হলো। লাখ লাখ লোক তুমুল করতালির মধ্য দিয়ে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে প্রিয় নেতাকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে ভূষিত করে লাখ লাখ কণ্ঠে ধ্বনি তুলেছিল, ‘জয় বঙ্গবন্ধু।’ সেদিন থেকে তার পূর্ণ নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হয়। বঙ্গবন্ধু নামটি বাংলাদেশের সাথে সমর্থক হয়ে গেছে, সমর্থক হয়ে গেছে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে, বাংলাদেশের মানুষের সাথে, মানুষের মনের সাথে মিশে গেছে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি। আমি বলতে চাই "বঙ্গবন্ধু" উপাধিটি শ্রেষ্ঠ উপাধি কিন্তু জাতির পিতা ও শেখ মুজিবুর রহমান নামটি বাঙালি জাতির জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে বাঙালি জাতির ভিতরে। এই নামটি যখন আমরা উচ্চারণ করি তখন সেটা বাংলাদেশ বুঝায়, বাংলাদেশের ইতিহাস বুঝায়, বাঙালি জাতির মুক্তির ইতিহাস বুঝায়। সুতরাং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর পালনের প্রাক্কালে ও জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকীর পালনের উপলক্ষে আজকে আমরা যখন এখানে কথা বলছি তখন আমাদের এই রাষ্ট্রের প্রাণ ভোমরা, রাষ্ট্রের যারা শিকড় অর্থাৎ তরুণ প্রজন্ম যদি বাংলাদেশের আসল ইতিহাস সম্বন্ধে ধারণা লাভ করে তাহলে এই রাষ্ট্র সমৃদ্ধির পথে থাকে। আর যদি সেই শিকড়কে আমরা যত্ন না করি তাহলে শিকড়ে আমরা যদি পানি না ঢালি তাহলে এই গাছ কিন্তু একসময় মরে যাবে। সুতরাং এই শিকড়কে সমৃদ্ধ করতে হলে আমদের তরুণ প্রজন্মের ভূমিকা রাখতে হবে।