বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ৫ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোনাম: নিরাপত্তা ইস্যুতে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না : ইসি    প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টির কারণে দুবাই ও শারজাহতে ঢাকা থেকে ৯টি ফ্লাইট বাতিল    শহরের চাপ কমাতে প্রান্তিক পর্যায়ের স্বাস্থ্য কেন্দ্রগুলো জরুরি    দ্বীপ উন্নয়ন ও কৃষি জমি সুরক্ষায় আইন করতে সংসদকে হাইকোর্টের পরামর্শ    ইতিহাসকেও দখল করার পাঁয়তারা করছে ক্ষমতা দখলকারী সরকার : আমীর খসরু    মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে নজর রাখতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ    ভূলের কথা স্বীকার করে মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেলেন সাংসদ পুত্র   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
নিরাপদ খাদ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সময়োপযোগী
ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: সোমবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ২২.০২.২০২১ ১:০৮ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

নিরাপদ খাদ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সময়োপযোগী

নিরাপদ খাদ্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা সময়োপযোগী

ভেজালমুক্ত খাদ্য বেঁচে থাকার মূলমন্ত্র। খাদ্য ছাড়া কোনো প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। এমনকি গাছপালারও খাদ্যের প্রয়োজন। তবে খাদ্য সব সময় জীবনকে বাঁচায় বা বাঁচিয়ে রাখতে পারে এমন নয়। কেবল সুষম খাদ্য আর ভেজালমুক্ত খাদ্যই জীবন বাঁচাতে সক্ষম। ভেজাল খাদ্য-খাদ্য হলেও তা পরিত্যাজ্য। বর্তমানে দেশে ভেজাল খাদ্যের বেশুমার কারবার চলছে। গ্রামগঞ্জ থেকে শুরু করে রাজধানী শহর সর্বত্র ভেজাল খাদ্য অবাধে বিক্রি, বাজারজাতকরণ এবং পরিবেশন হচ্ছে। এসব ভেজাল খাদ্য খেয়ে দেশের মানুষ নানা ধরনের ব্যাধিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। রান্না করা খাদ্যে যেমন ভেজাল, তেমনি খাদ্য তৈরির উপকরণেও ভেজালের মাত্রা স্পষ্ট।

প্রাণীর দেহে বিষাক্ত কেমিকেল এবং ওষুধ প্রয়োগ করে ঝুঁকিপূর্ণভাবে প্রাক রান্না সামগ্রী উৎপন্ন করা হচ্ছে। বিশেষ করে গরু, মুরগিতে যেমন এই ধারা বহমান তেমনি মাছেও তা লক্ষণীয়। ব্রয়লার মুরগির সর্বোচ্চ বয়স ত্রিশ দিনের ভেতরে আড়াই তিন কেজি ওজন বানানো যা কৃত্রিম ও ক্ষতিকারক ওষুধের প্রয়োগ বলে অনায়াসে ধরে নেওয়া যায়। এসব মুরগি রান্নার পরেও তাদের ভেতরে জমানো ক্ষতিকর উপাদান কোনোভাবেই ধ্বংস হয় না বরং সেই ক্ষতিকর ওষুধ সামগ্রী আমাদের দেহে প্রবেশ করে নিত্য-নতুন স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। একই কথা গরু এবং মাছের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তবে সান্তনা এতটুকু আমরা মাছ মাংস কাঁচা খাই না। সেটা রান্না করে থাকি। তাই হয়তো রাসায়নিক বিক্রিয়া সরাসরি আমাদের মোকাবিলা করতে হয় না। কিন্তু রান্না করা খাদ্যে যখন ইচ্ছাকৃতভাবে ভেজাল বা স্বাস্থ্যহানিকর দ্রব্যাদি বেশি মুনাফার লোভে মেশানো হয় তখন খাদ্য আর খাদ্য থাকে না হয়ে পড়ে বিষ।

এই বিষের বিরুদ্ধে আমাদের প্রধানমন্ত্রী হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন। তিনি নিরাপদ এবং ঝুঁকিমুক্ত খাদ্য নিশ্চিত করার উপরে জোর দিয়েছেন। একই সঙ্গে এই ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু যে প্রশ্নটি সামনে এসেছে সেটি আরও ভয়াবহ এবং মারাত্মক। কারণ, যারা খাদ্যে ভেজালকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন ও শাস্তির আওতায় আনবেন, তারাই তো এখন এসব অপকর্মকারীদের অনুঘটকের দায়িত্ব পালন করছেন।

সরকারের যেসব সংস্থা রয়েছে যারা মাসে মাসে বেতন-ভাতা, বাড়ি ভাড়া টিএ/ডিএ তুলছেন তারা কিন্তু বিষয়টিকে এড়িয়ে চলেছেন। তাদের সামনে ভেজাল দেওয়া হলেও তারা সেখান থেকে নিজেদের বখরা নিয়ে চলে আসেন। ভাবখানা এমন, আরে ব্যাটা মরলে তোর সন্তান আত্মীয়-স্বজন মরবে আমার কী? কিন্তু কথায় আছে নগরে আগুন লাগলে দেবালয় এড়ায় না। দুর্ভাগ্য জাতির এই ভেজালের বিরুদ্ধে আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রীকে কথা বলতে হয়। অথচ এসব দেখা এবং প্রতিকারের জন্য যে বিশাল কর্মী বাহিনী রয়েছে তারা কেবলই ঠুঁটো জগন্নাথের মতো বসে বসে জনগণের দুঃখ উপভোগ করছেন!  ভেজালের বিরুদ্ধে কথা বলা বা ভেজাল প্রতিরোধে তাদের কোনো কর্মকাণ্ড জাতি দেখতে পাচ্ছে না। উপরন্তু যারা ভেজাল দিচ্ছেন খাদ্যকে বিষে পরিণত করছেন তারা বহাল তবিয়তে থেকে তাদের কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। মানুষকে ভেজাল খাইয়ে নিজেদের পকেট ভরছেন।

খাদ্যে ভেজাল দেওয়ার মতো অপরাধ কোনো বিবেকসম্পন্ন মানুষ করতে পারে না। যারা এই কাজটি করেন তারা কোনোভাবেই  নিজেকে মানুষ বলে দাবি করতে পারেন না। তারপরেও তারা সমাজে প্রতাপশালী একই সঙ্গে প্রভাবশালী। এজন্যই হয়তো দেশের প্রধানমন্ত্রীকে নির্দেশ দিতে হয়। সবকিছুই যদি প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে হয় তাহলে মাথাভারী প্রশাসনের দরকার কী? আগেই বলেছি সুস্থ জাতি, মেধাবী জাতি গঠনে খাদ্যের ভূমিকা অপরিসীম। ভেজাল খাদ্যের কারণে দেশে প্রতিনিয়ত দুরারোগ্য রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ক্যানসার, ডায়াবেটিস, হৃদরোগ, কিডনি বিকলের মতো দুরারোগ্য রোগ এখন আমাদের দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এসব রোগ সৃষ্টির জন্য ভেজাল খাদ্য দায়ী। কিন্তু তা প্রতিরোধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই। যারা ভেজাল দিচ্ছেন তাদের মনে হয় এই গল্পটি বেশ ভালোভাবেই পড়া আছে। এক গোয়ালা রাজাকে প্রতিনিয়ত ভেজাল ঘি সরবরাহ করতেন। রাজা সেটাকে আসল এবং এক নম্বর গাওয়া ঘি মনে করে তা নির্দ্বিধায় খেতেন। একদিন গোয়ালার মনে অনুশোচনা এলো। সেদিন সে ভাবলো রাজা মশাইকে তো এতদিন নকল ঘি খাইয়ে অনেক পাপ করেছি।

এই পাপ মার্জনার একমাত্র উপায় হচ্ছে তাকে আসল ঘি খাওয়ানো। সেই মোতাবেক সেদিন সে রাজা মশাইকে আসল ঘি দিয়ে এলেন। কিন্তু  ভবিতব্য! সেই আসল ঘি খেয়ে রাজা মশাই সারা রাত ঘর আর বাথরুম করে বড়ই ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। বদ্যি ডাকা হলো। বদ্যিরা এসে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে রাজার পেট খারাপের কোনো কারণ খুঁজে পেলেন না। তখন রাজা মশাইকে প্রশ্ন করা হলো আপনি গতরাতে খাবারের সময় কী কী খেয়েছিলেন? রাজার পাচক প্রতিদিনের খাদ্য তালিকা গড় গড় করে বলে গেল। তবে... এই তবে হচ্ছে এদিন তারা যে ঘি ব্যবহার করেছেন তা অন্যদিনের ঘিয়ের তুলনায় একটু অন্যরকম ছিল। ব্যস আর যায় কোথা ডাকা হলো গোয়ালাকে। তাকে ভেজাল ঘি দেওয়ার দায়ে রাজামশাই মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করলেন।



শেষে যখন তাকে মৃত্যুকূপের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন সে জানতে চাইল রাজামশাই আমাকে কোন অপরাধে এই শাস্তি? রাজা বেশ গম্ভীর স্বরে জবাব দিলেন, জান না চাঁন, তোমাকে গতকাল ভেজাল ঘি খাওয়ানোর অপরাধে এই শাস্তি। গোয়ালা তখন বলল হুজুর মা-বাপ, আমি সত্যিই এদিন ভেজাল ঘি দিইনি। ভগবানের দিব্যি আগে যত ঘি দিয়েছি সবই ভেজাল। সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করতে গতকাল আমি আসল ঘি দিয়েছিলাম। কিন্তু ভগবানের কি লীলা দেখেন এই আসল ঘি দেওয়ার অপরাধে আজ আমার মৃত্যুদণ্ড পেতে হলো। আমাদের দেশে যারা ভেজালের কারবার করছেন তারা হয়তো এই গল্পটি ভালোমতো পড়েছেন। তাই ভেজালের মহোৎসবে তারা নাম লিখিয়েছে।

আমরা তাদেরকে আর এই গল্পের সারমর্ম পড়তে দিতে রাজী নই। দেশে খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়ে আমরা কোনো অজুহাত শুনতেও রাজী নই। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনানুযায়ী আমরা ভেজালমুক্ত খাদ্য পেতে চাই। এরজন্য যা করণীয় কর্তৃপক্ষ সে বিষয়ে সজাগ এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেবেন বলে আমরা প্রত্যাশা করি। আগামী প্রজন্ম যেন ভেজালমুক্ত খাবার খেয়ে বেড়ে উঠার অধিকার পায় সে বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]