প্রকাশ: রোববার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ৬:৫০ পিএম আপডেট: ২১.০২.২০২১ ৬:৫৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
দুর্নীতি দায়ে জেল খেটে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত হওয়া বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার ভাড়া বাড়ি ‘ফিরোজা’ দেখভাল করার কোনো মানুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। জেল খানায় যাওয়া এবং ফিরে আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১৫ মাস ধরে বাড়িটির মাসিক ভাড়া পরিশোধ করা হয়নি। এমনকি বাকি পড়েছে বিদ্যুৎ, গ্যাস, ময়লা বিলসহ অন্যান্য বিলও। এ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বইছে সমালোচনার ঝড়। বিএনপির নেতাদের মধ্যে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর পক্ষ থেকে এ ভাড়ার টাকা পরিশোধ করা হলেও তিনি তা করেননি। এমনকি দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অসুস্থ ব্যরিস্টার মওদুদ আহমেদ সরাসরি অভিযোগ করেই বলেছেন, দলের বিভিন্ন নেতাদের কাছ কাছে ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) বাসা ভাড়া ও অন্যান্য খরচ হিসাবে টাকা সংগ্রহ করা হলেও তা পরিশোধ না করে লোপাট করেছেন তিনি।
তথ্যসূত্র বলছে, কারাগারে যাওয়ার আগে ২০১০ সাল থেকে গুলশানে দেড় বিঘার বিশাল বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন বেগম খালেদা জিয়া। ২০১৮ সালের ৮ই ফেব্রুয়ারি কারাগারে যাবার পর থেকেই দলের নেতা কিংবা পরিবার ওই বাড়ির খোঁজ কেউ নিয়েছে বলে জানা নেই। এছাড়া খালেদা জিয়া কারাগার থেকে ছাড়া পেয়ে গুলশানের ফিরোজার বাসায় না উঠে, বিএনপির গুলশান কার্যালয়ে উঠেছিলেন। অপরদিকে যেহেতু ওই দিকে বেশি কড়াকড়ি থাকে, ফলে আমাদের নেতারা গুলশানের দিকে খুব একটা যায় না। খালেদা জিয়ার আগের ভাড়া বাসা ফিরোজায় দু’চারজন কাজের লোক আর ফার্নিচার ছাড়া কিছুই নেই। কাজের লোকরা কি এখনো আছে কি না, সে বিষয়ও কিছু জানা নেই।
এ বিষয়ে জানতে চেয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর থেকে শুরু করে দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দের কাছে জানতে চাইলেও তারা এ বিষয় নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। বরং তারা একে অন্যের উপরে দোষ চাপিয়েছেন।
তবে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ বলেন, বাড়ি ভাড়া, গ্যাস-পানি-বিদ্যুৎ বিল মূলত রিজভীর তদারকি করা কথা ছিলো। তিনি যেহেতু পার্টি অফিসেই থাকেন, তাই সেখান থেকে রিজভীর তত্ত্বাবধায়ন করার কথা। কিন্তু তিনি যে সেটি করছেন না- সেটা তো আমাদের জানার কথা না।
মওদুদ আহমেদ আরও বলেন, যদিও প্রতিমাসে দলীয় তহবিল থেকে ম্যাডামের বাড়ি ভাড়াসহ ইউটিলিটি বিলের একটি খরচ দেখানো হয়। সেটি আসলে কোথায় যায়- এখন সেই প্রশ্ন দলে দানা বেধেছে দলের অভ্যন্তরে। ম্যাডামের বাড়ির বকেয়া বিল বিষয়ে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পাওয়ার পর আমরা ইমেজ সংকটে পড়েছি।
প্রসঙ্গত, ২০১০ সালে আইনি লড়াইয়ে হেরে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি ছাড়েন খালেদা জিয়া। তখন গুলশানে আগের বাড়ির পাশেই ভাড়া নেন ফিরোজা। সেখানে তিন বছরের জন্য ওঠেন তিনি। গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ১ নম্বর বাড়িটিই ফিরোজা। ২০১০ সালে অগ্রিম ১০ লাখ টাকায় এই বাড়িটি ভাড়া নেন খালেদা জিয়া। পরে, ২০১১ সালে ৩ বছরের জন্য বাড়িটি ভাড়া নেন বিএনপি নেতা মোছাদ্দেক আলী ফালু। তখন এর মাসিক ভাড়া ধরা হয় তিন লাখ টাকা। ভাড়া বাড়ি হিসেবে প্রথম দফায় তিন বছরের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৩ সালে। এরপর কয়েকদফা নবায়ন করা হয় চুক্তির। সে চুক্তিও শেষ হয় পনের মাস আগে।
বাড়ির মালিক বর্তমানে বিদেশে রয়েছেন। উল্লেখ্য, মঈনুল রোডের বাড়ি ছাড়ার পর বিএনপি নেতা অবসরপ্রাপ্ত মেজর কামরুল ইসলামের ছেলে তানভীর ইসলামের গুলশানের বাড়িটি ভাড়া নেন খালেদা জিয়া।
এ বিষয়ে মন্তব্য চেয়ে বিএনপি নেতা রুহুল কবীর রিজভীকে ফোন করা হলে ভোরের পাতার নাম শুনেই ফোনটি কেটে দেন।
ভোরের পাতা/এএম