শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

শিরোনাম: ঢাকা-ব্যাংকক রোহিঙ্গা ইস্যুতে একসঙ্গে কাজ করবে    ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের আইন উপ সম্পাদক হলেন জার্জিস বিন এরতেজা     দেশে টিআইএনধারীর সংখ্যা ১ কোটিরও বেশী    বিএনপি থেকে আরও ৭৩ নেতাকে বহিষ্কার    ঢাকার উত্তরে ৯টি স্থানে বসবে কুরবানির পশুর হাট    এবার ফিজের নতুন নাম দিল চেন্নাই    বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম সামান্য বেড়েছে   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
সোলায়মান (আ.) সমগ্র প্রাণীর ভাষা বুঝতেন
জাওহার ইকবাল খান
প্রকাশ: শুক্রবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২১, ১২:০০ এএম আপডেট: ১৯.০২.২০২১ ৩:৩৯ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ

সোলায়মান (আ.) সমগ্র প্রাণীর ভাষা বুঝতেন

সোলায়মান (আ.) সমগ্র প্রাণীর ভাষা বুঝতেন

আল্লাহ রব্বুল আলামীন বিশ্ববাসির হেদায়েতের জন্য অসংখ্য নবী ও রাসূল পাঠিয়েছেন। হযরত সুলাইমান আলাইহিস সালাম ছিলেন আল্লাহ রব্বুল আলামীনের একজন সম্মানিত নবী, যাকে আল্লাহ রব্বুল আলামীন একই সঙ্গে দুটি সম্মানিত আসন দান করেছিলেন একটি নবুওয়াত অন্যটি সিংহাসন, বিশ্বজগতের সকল প্রাণীকূলকে তার আনুগত্য করে দিয়েছিলেন তিনি সবকিছুর ভাষা বুঝতে পারতেন।

যেমন আল্লাহ বলেন, ‘সুলায়মান দাঊদের উত্তরাধিকারী হয়েছিল এবং বলেছিল, হে লোক সকল! আমাদেরকে পক্ষীকুলের ভাষা শিক্ষা দেওয়া হয়েছে এবং আমাদেরকে সবকিছু দেওয়া হয়েছে। নিশ্চয়ই এটি একটি সুস্পষ্ট শ্রেষ্ঠত্ব।’ (নমল ১৬) পক্ষীকুল তাঁর হুকুমে বিভিন্ন কাজ করত। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ পত্র তিনি হুদহুদ পাখির মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী ‘সাবা’ রাজ্যের রাণী বিলক্বীসের কাছে প্রেরণ করেছিলেন।

একদা হযরত সোলায়মান (আ.) তাঁর লোক-লস্কর সৈন্য-সামন্ত নিয়ে সিংহাসনে আরোহণ করে এক নতুন জায়গায় গিয়ে অবতরণ করলেন। সেখানে অবতরণ করা মাত্র তিনি শুনলেন পিপীলিকার রাজা চিৎকার করে বলছে, হে পিপীলিকার দল! তোমরা অতিসত্বর নিজ নিজ গর্তে গিয়ে আশ্রয় গ্রহণ কর, কারণ সোলায়মান (আ.) তাঁর সৈন্য-সামন্ত নিয়ে এখানে এসে পৌঁছেছেন। তাঁর সৈন্য অলক্ষে হয়ত তোমাদেরকে পদদলিত করে ফেলবে। হযরত সোলায়মান (আ.) পিপীলিকার কথা শুনে হাসলেন এবং বললেন, ক্ষুদ্র প্রাণী পিপীলিকার রাজা এতটা সতর্ক এবং দয়াবান তা আমি কোনদিন ভাবিনি। তিনি তখন পিপীলিকার রাজাকে হাতে তুলে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি তোমার প্রজাবৃন্দের প্রতি এতটা মেহেরবান কেন এবং আমার সম্পর্কে যে উক্তি করেছো তাতে মনে হয় আমি প্রাণীকুলের উপর জুলুম করে থাকি। আমার উপর এভাবে কেন দোষারোপ করলে? পিপীলিকার রাজা তখন উত্তর দিল, হে আল্লাহর খলিফা! আপনি আল্লাহ তায়ালার শ্রেষ্ঠ নবী। তাই আপনার দায়িত্ব অনেক বড়। আমরা অত্যান্ত ক্ষুদ্র প্রাণী, আমাদের  দায়িত্বও ক্ষুদ্র। আল্লাহতায়ালা আমার উপর প্রজাদের ভাল-মন্দ দেখা শুনার দায়িত্ব অর্পণ করেছেন, সে হিসেবে তাদের সুখে আমি সুখি হই এবং তাদের দুঃখে আমি অস্থির হয়ে পড়ি। এ ছাড়া যাদের ভাল-মন্দ তদারকির দায়িত্ব আল্লাহ তায়ালা  আমার ওপর অর্পণ করেছেন। এজন্য আপনার সৈন্যদের আগমন এবং তাদের অর্শ্ব চালনার সময় তাদের বেখেয়ালে  আমার প্রজাবৃন্দ পদদলিত হতে পারে। এ আশঙ্কায় আমি তাদেরকে সর্তক করে দিয়েছি। দ্বিতীয় আপনাকে জালেম বলার ধৃষ্টতা আমার মাঝে আদৌ নেই। শুধু আপনার সৈন্যদের বেপরোয়া অশ্ব চালনার বিষয়ে আমি দুশ্চিন্তাগ্রস্ত ছিলাম যে, ক্ষুদ্র প্রাণীদের বড় প্রাণীরা কোন পরোয়া করে না। তাই তাদের অশ্ব পদতলে পিপীলিকারা পিষ্ট হওয়ার অতি সম্ভাবনা দেখে আমি তাদেরকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছি। আপনাকে দোষারোপ করা আমার উদ্দেশ্য নয়।

হযরত সোলায়মান (আ.) বললেন, তোমার কথা শুনে আমি খুশি হয়েছি। এখন বলতো তোমাদের পিপীলিকাদের সৈন্য সংখ্যা কত? পিপীলিকার রাজা উত্তর দিল, ধরুন পিপীলিকাদের প্রধান সেনাপতির সংখ্যা চল্লিশ হাজার। প্রত্যেক সেনাপতির অধিনে চল্লিশ হাজার সুবেদার। প্রত্যেক সুবেদারের অধিনে রয়েছে চল্লিশ হাজার হাকিম। প্রত্যেক হাকিমের অধিনে রয়েছে চল্লিশ হাজার ফৌজদার। হযরত সোলায়মান (আ.) এ পর্যন্ত শুনে বলেলন, আচ্ছা বুঝেছি সৈন্য সংখ্যা বিরাট। আচ্ছা এখন বল তোমার রাজ্য ভালো? না আমার রাজ্য  ভালো? পিপীলিকার রাজা বলল, আমার রাজ্য আপনার রাজ্যের চাইতে উত্তম। কারণ জিন দ্বারা আপনার সিংহাসন তৈরি করে উহা বাতাসের সাহায্যে পরিচালানা করছেন। এতে বুঝা যাচ্ছে আপনি পর নির্ভরশীল আর আমার কোন সিংহাসন নেই। তাই কারো উপর ক্ষণিকের জন্যও আমাকে নির্ভর করতে হয়না। হযরত সোলায়মান (আ.) পিপীলিকার কথা শুনে বললেন, তোমার মাথায় এত বুদ্ধি, তোমার কথায় এত যুক্তি এ সমস্ত তুমি কোথায় শিখলে? পিপঁড়াদের রাজা বলল, হে আল্লাহর নবী! যে মহান আল্লাহতায়ালা আপনাকে বিশাল রাজ্য ও অশেষ বিদ্যা এবং জ্ঞান বিজ্ঞান দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন, সে মহান আল্লাহতায়ালা আমার প্রাপ্য জ্ঞান ও বিদ্যা আমাকেও দান করেছেন।

এ বিষয়ে কুরআনী মহান আল্লাহতায়ালা বলেন,- ‘অতঃপর সুলায়মানের সম্মুখে তার সোনাবাহিনীকে সমবেত করা হ’ল জিন, মানুষ ও পক্ষীকুলকে। তারপর তাদেরকে বিভিন্ন ব্যুহে বিভক্ত করা হ’ল’ (১৭)। ‘অতঃপর যখন তারা একটি পিপীলিকা অধ্যুষিত এলাকায় উপনীত হল, তখন এক পিপীলিকা বলল, ‘হে পিপীলিকা দল! তোমরা তোমাদের গৃহে প্রবেশ কর। অন্যথায় সুলায়মান ও তার বাহিনী অজ্ঞাতসারে তোমদেরকে পিষ্ট করে ফেলবে’ (১৮)। ‘তার কথা শুনে সুলায়মান মুচকি হাসল এবং বলল, ‘হে আমার পালনকর্তা! তুমি আমাকে ক্ষমতা দাও, যেন আমি তোমার নে‘মতের শুকরিয়া আদায় করতে পারি, যা তুমি আমাকে ও আমার পিতা-মাতাকে দান করেছ এবং যাতে আমি তোমার পসন্দনীয় সৎকর্মাদি করতে পারি এবং তুমি আমাকে  নিজ  অনুগ্রহে  তোমার  সৎকর্মশীল  বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত কর’ (নমল ২৭/১৬-১৯)।

উপরোক্ত আয়াতগুলিতে প্রমাণিত হয় যে, সুলায়মান (আ.) কেবল পাখির ভাষা নয়, বরং সকল জীবজন্তু এমনকি ক্ষুদ্র পিঁপড়ার কথাও বুঝতেন। এজন্য তিনি মোটেই গর্ববোধ না করে বরং আল্লাহর অনুগ্রহের প্রতি শুকরিয়া আদায় করেন এবং  নিজেকে  যাতে  আল্লাহ  অন্যান্য  সৎকর্মশীলদের    অন্তর্ভুক্ত করেন সে প্রার্থনা করেন। এখানে আরেকটি বিষয় প্রমাণিত হয় যে, তিনি কেবল জিন-ইনসানের নয় বরং তাঁর সময়কার সকল জীবজন্তুরও নবী ছিলেন। তাঁর নবুয়্যাতকে সবাই স্বীকার করত এবং সকলে তাঁর প্রতি আনুগত্য পোষণ করত।

হুদহুদ’পাখির ঘটনা: হযরত সুলায়মান (আ.) আল্লাহর হুকুমে পক্ষীকুলের আনুগত্য লাভ করেন। একদিন তিনি পক্ষীকুলকে ডেকে একত্রিত করেন ও তাদের ভাল-মন্দ খোঁজ-খবর নেন। তখন দেখতে পেলেন যে, ‘হুদহুদ’ পাখিটা নেই। তিনি অনতিবিলম্বে তাকে ধরে আনার জন্য কড়া নির্দেশ জারি করলেন। সাথে তার অনুপস্থিতির উপযুক্ত কারণ দর্শানোর নোটিশ জারি করলেন।

কুরআনের ভাষায় ,‘সুলায়মান পক্ষীকুলের খোঁজ-খবর নিল। অতঃপর বলল, কি হ’ল হুদহুদকে দেখছি না যে? না-কি সে অনুপস্থিত’ (নমল ২০)। সে বলল, ‘আমি অবশ্যই তাকে কঠোর শাস্তি দেব কিংবা যবহ করব অথবা সে উপস্থিত করবে উপযুক্ত কারণ’ (২১)। ‘কিছুক্ষণ পরেই হুদহুদ এসে হাযির হয়ে বলল, (হে বাদশাহ!) আপনি যে বিষয়ে অবগত নন, আমি তা অবগত হয়েছি। আমি আপনার নিকটে ‘সাবা’ থেকে নিশ্চিত সংবাদ নিয়ে আগমন করেছি।’- নমল ২০-২২,



এ পর্যন্ত বলেই সে তার নতুন আনীত সংবাদের রিপোর্ট পেশ করল। হুদহুদের মাধ্যমে একথা বলানোর মাধ্যমে আল্লাহ আমাদেরকে একথা জানিয়ে দিলেন যে, উল্লেখ্য যে, ‘হুদহুদ’ এক জাতীয় ছোট্ট পাখির নাম। যা পক্ষীকুলের মধ্যে অতীব ক্ষুদ্র ও দুর্বল এবং যার সংখ্যাও দুনিয়াতে খুবই কম। বর্ণিত আছে যে, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) একদা নও মুসলিম ইহুদী পন্ডিত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, এতসব পাখী থাকতে বিশেষভাবে ‘হুদহুদ’ পাখির খোঁজ নেওয়ার কারণ কি ছিল? জওয়াবে তিনি বলেন, সুলায়মান (আ.) তাঁর বিশাল বাহিনীসহ ঐসময় এমন এক অঞ্চলে ছিলেন, যেখানে পানি ছিল না।

আল্লাহ তা‘আলা হুদহুদ পাখিকে এই বৈশিষ্ট্য দান করেছেন যে, সে ভূগর্ভের বস্তু সমূহকে এবং ভূগর্ভে প্রবাহিত পানি উপর থেকে দেখতে পায়। হযরত সুলায়মান (আ.) হুদহুদকে এজন্যেই বিশেষভাবে খোঁজ করছিলেন যে, এতদঞ্চলে কোথায় মরুগর্ভে পানি লুক্কায়িত আছে, সেটা জেনে নিয়ে সেখানে জিন দ্বারা খনন করে যাতে দ্রুত পানি উত্তোলনের ব্যবস্থা করা যায়’। যা আল্লাহ পাকের অপরিশীম ক্ষমতার অনন্য নিদর্শন, আল্লাহ আমাদেরকে এ বিষয়াবলী থেকে শিক্ষা গ্রহন করে হেদায়েতের আলোতে আলোকিত করুন।

লেখক, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।

« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Screenshot_1.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]