শিরোনাম: |
উচ্চ আদালতে আজও উপেক্ষিত বাংলা
বিপুল হাসান
|
![]() উচ্চ আদালতে আজও উপেক্ষিত বাংলা স্বাধীনতার পর থেকে দেশের সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে এবং এ ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতিও হয়েছে। সরকারি অফিসের নথিপত্র, চিঠির ভাষা এখন প্রায় শত ভাগই বাংলা লেখা হয়। কিন্তু রাষ্ট্রের একটি প্রতিষ্ঠানে এখনও ইংরেজির প্রাধান্য চলছে, আর সেটি হলো বিচার বিভাগ। কিন্তু নিম্ন আদালতের বিচারকাজে বাংলার ব্যবহার বাড়লেও উচ্চ আদালতে এখনো অবহেলিত। সুপ্রিম কোর্টে এখনো বেশির ভাগ রায় বা আদেশ ইংরেজিতে দেওয়া হয়। খুব কমসংখ্যক রায় বা আদেশ বাংলায় দেওয়া হচ্ছে। সব ক্ষেত্রে বাংলার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করে ১৯৮৭ সালের ৮ মার্চ বাংলা ভাষা প্রচলন আইন প্রণয়ন করা হয়। সংবিধানেও সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের নির্দেশনা রয়েছে। তবে আজও উচ্চ আদালতে পূর্ণাঙ্গভাবে এ বিধান কার্যকর হয়নি। আদালতসহ সর্বত্র বাংলা ভাষার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করতে আট বছর আগে আইন কমিশন থেকেও সরকারকে সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন হয়নি। সুপ্রিম কোর্টের একাধিক বিচারপতি ও আইনজীবীর দাবি, উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষা ব্যবহারের কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাংলায় রায় লেখার আইনি পরিভাষা নেই । গুরুত্বর্পুণ আইনি শব্দ বিদেশি হওয়ার কারণে ইংরেজিতে রায় দেয়া হয়। যে শব্দগুলোর বাংলায় রুপান্তর করা যায় তা কেন এখন পর্যন্ত বাংলায় বলা হচ্ছে না। উচ্চ আদালতে বিচারিক প্রক্রিয়ায় কেন বাংলা চালু হচ্ছে না—এ প্রশ্নে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা জানান, মানসিকতা, আদালতে এখনো ব্রিটিশদের ভাবধারা বজায় থাকা, সুপ্রিম কোর্টের রুলস (বিধিমালা) ইংরেজিতে থাকা, প্রচলিত আইন, আইনের বই এবং মামলার নজির ইংরেজিতে থাকা, ইংরেজিতে আইনের পরিভাষায় লাতিনের প্রভাব এবং লাতিন ভাষার যথাযথ প্রতিশব্দ না থাকাই এর মূল কারণ। তারা বলছেন, আইনের বই ইংরেজিতে লেখা। প্রতিনিয়ত বিদেশি আদালতের ঐতিহাসিক রায় নজির হিসেবে দেখাতে হয়। এসব রায় ইংরেজিতে হওয়ায় আইনজীবী ও বিচারপতিদের কাছে ইংরেজি ভাষা সহজতর। এ কারণেই ইংরেজিতে রায় বা আদেশ বেশি লেখা হয়। এ প্রসঙ্গে হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেছেন, উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় লিখতে আইনি বাংলা পরিভাষা নেই বলে যে অজুহাত দাঁড় করানো হয় সেগুলো কোনো সমস্যা নয় বরং প্রকৃত সমস্যা হয়তো চেতনায় ও পারিশ্রমিকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বঙ্গবন্ধু তো বলেছিলেন, ভুল সঠিক যাই হোক, আপনারা বাংলা চালু করেন। বঙ্গবন্ধুর অনেক স্বপ্ন ও চেতনা বাস্তবায়নের ভিড়ে ভাষা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর চেতনাটি কিভাবে যেন চাপা পড়ে গেছে। পিলখানা হত্যাকাণ্ড মামলার রায় দেওয়া হয়েছিল বাংলায়। বাংলায় এ রায় দেওয়া প্রসঙ্গে বিচারপতি মো. আবু জাফর সিদ্দিকী বলেন, রায়টি আমি বাংলায় লিখেছি। কারণ আমার মনে হয়েছে, এসএসসি বা এইচএসসি পাশ একজন ব্যক্তি, আমি যাকে মৃত্যুদণ্ড বা অন্যকোনো দণ্ড দিচ্ছি,রায়টি যদি ইংরেজিতে লেখা হয় তিনি সেটি বুঝবেনই না, কোন যুক্তিতে কেন তাকে দণ্ডটি দেওয়া হলো। তারাই যদি ইংরেজি না বোঝেন গ্রামবাংলার অল্প শিক্ষিত, পড়াশোনা না জানা মানুষের ক্ষেত্রে কী অবস্থা হবে? আমি মনে করি, কেন কি রায় দেওয়া হলো, বিচারক হিসেবে বাদী ও বিবাদী উভয়পক্ষের কাছেই সেটি স্পষ্টভাবে তুলে ধরার দায়বদ্ধতা রয়েছে। মাতৃভাষাই পারে খুব সহজেই সে দায়মুক্তি দিতে। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ও সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেন, আমাদের দেশে প্রচলিত যেসব আইন রয়েছে তার সবই ইংরেজিতে। একই সঙ্গে মামলার শুনানিতে যেসব নজির তুলে ধরা হয় তা-ও ইংরেজিতে লেখা। এ ছাড়া আইনের কিছু ইংরেজি ও লাতিন ভাষার প্রতিশব্দ বাংলায় খুঁজে পেতে বেগ পেতে হয়। যে কারণে সওয়াল-জবাব, রায়-আদেশ ইংরেজিতেই বেশি হয়। তবে উচ্চ আদালতে এখন বাংলার ব্যবহার বাড়ছে। এটি আশাব্যঞ্জক। এটি যদি আরও বাড়ে তাহলে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি যেমন লাঘব হবে, তেমনি বিচারক ও আইনজীবীরাও বাংলার প্রতি উৎসাহী হবেন। আশার কথা হলো , উচ্চ আদালতে রায় লেখায় বাংলা ভাষার ব্যবহার বাড়ছে। গত ২০ বছরে প্রায় অর্ধলাখ রায় ও আদেশ লেখা হয়েছে বাংলা ভাষায়। শুধু তাই নয়, উচ্চ আদালতে আবেদনও এখন বাংলায় করা হচ্ছে। ফলে বিচারপ্রার্থী সাধারণ মানুষ স্বস্তিবোধ করছে। ভোরের পাতা-এনই |
« পূর্ববর্তী সংবাদ | পরবর্তী সংবাদ » |