সব রোগের সমাধান দিচ্ছেন। পিত্তের পাথর অপসারণ, জ্বর, মাথাব্যাথা ও জ্বিন ভুতের হাত থেকে রক্ষাসহ সব রোগের চিকিৎসার নামে একটি চক্র হাতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। দূর-দূরান্ত থেকে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত সরল সহজ রোগীদের সঙ্গে প্রতারণা করছেন তিনি। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থানার তারাইল ফুকরা মাদরাসা এলাকার মৃত মাও. আবদুর রাজ্জাকের ছেলে মাও. মাহামুদুল হাসানসহ একটি প্রতারক চক্র চিকিৎসার নামে এ অপচিকিৎসা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলা সদরের টিএন্ডটি সড়কের মৃত আলোমগীর মৃধার স্ত্রী মিনারা আলম (৭৫) বলেন, গত ডিসেম্বর মাসে তিনি পেটে ব্যথায় অসুস্থ্য হলে চলতি মাসের শুরুর দিকে খুলনা আড়াইশ’ বেড হাসপাতালের ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এক্সরে করান। পরীক্ষায় পিত্তে পাথর ধরা পড়ে। ডাক্তার বলেছেন, অপারেশন করে পাথর সরাতে হবে। তিনি ডাইবেটিক্স-এ আক্রান্ত হওয়ায় অপারেশনে ভয় পান। রাজাপুরের পরিচিত অন্য এক রোগীর কাছে ঝাড়ফুক দিয়ে পিত্তের পাথর অপসারন করার কথা শুনেন মিনারা বেগম এবং ওই রোগীর কাছ থেকে ওঝার ফোন নাম্বার নিয়ে যোগাযোগ করেন।
গত ১৬ জানুয়ারি কাশিয়ানি উপজেলার তারাইল ফুকরা মাদরাসায় হুজুরের গ্রামের বাড়িতে দেখা করতে বলা হয়। মিনারা তার বড় মেয়েকে সঙ্গে করে তারিখ মতো সেখানে যান। দিনের বেলা হলেও একটি বিদ্যুত বিহীন কক্ষে বসে ঝার ফুক দিয়ে পাথর সাদৃশ্য বস্তু নাভি থেকে বের করা হয়েছে বলে অন্ধকারে শাহাদত আঙ্গুলে ধরিয়ে দেখান। রোগী মিনারা পাথর নিয়ে আসতে চাইলে তা ওঝা হুজুর আনতে দেয়নি। পাথর বের করার পরে ১০ হাজার ৩শ’ টাকা এবং গাছড়া তদবিরের জন্য আরো ২ হাজার ৫শ’ টাকা রোগীর কাছে ওঝা দাবি করলে দর কসাকসি করে ৮ হাজার টাকা দেওয়া হয়। টাকা না থাকায় গাছড়া তদবির না নিয়ে চলে আসেন মিনারা। রোগী মিনারা আলম গত সপ্তাহে আবার এক্সরে করিয়ে দেখেন তার পিত্তের পাথর অপসারণ হয় নাই। হুজুরের কাছ থেকে ফিরে আসার সময় রোগীকে একটি ভিজিটিং কার্ড দেওয়া হয়। কার্ডে নাম দেওয়া রয়েছে মাও. আবদুর রাজ্জাক এবং ফোন নাম্বার লেখা রয়েছে ০১৭১১০২৯৭৮৭। ওই নাম্বারে এক রোগীর অভিভাবক সেজে যোগাযোগ করা হলে অপর প্রান্ত থেকে প্রথমে আবদুর রাজ্জাক বলে স্বিকার করলেও এক পর্যায় তার নাম কামাল হোসেন বলে স্বীকার করেন। আবদুর রাজ্জাক মারা গেছেন বলে জানান। তিনি আবদুর রাজ্জাকের ভাগিনা বলেও জানান। বর্তমানে চিকিতসা দেন আবদুর রাজ্জাক হুজুরের ছেলে মাও. মাহামুদুল হাসান এবং তার ফোন নাম্বার ০১৭১২৯০০৭০৭। কামালের কাছে জানতে চাওয়া হয় ওঝাগিড়ি করে এরকম চিকিৎসা দেওয়া যায় কিনা। কামাল এ বিষয়ে মাহামুদুল হুজুরের কাছে জানতে বলেন। কিন্তু এর পরে মাও. মাহামুদুল হাসানের ০১৭১২৯০০৭০৭ নাম্বারে একাধিকবার ফোন দিলে সে রিসিভ করেননি। রাজাপুরের এরকম আরো অনেকে তার কাছে গিয়ে তদবির এনেছেন। কিন্তু দ্বিতীয়বার আবারো ডাক্তার পরীক্ষা করাননি বলে তাদের কাছে এ প্রতারণা ধরা পরেনি। এবিষয়ে কাশিয়ানি থানার ওসি মো: আজিজুর রহমান বলেন, আবদুর রাজ্জাক আগে ওঝাগিড়ি করতো। সে মারা গেছে। এখন তার ভাগিনাসহ আরো কারা এ কাজ করছেন। বিষয় খতিয়ে দেখার আশ্বা দেন তিনি।
এ বিষয় ঝালকাঠি জেলা সদর হাসপাতালের সিভিল সার্জন ডা.রতন কুমার ঢালী বলেন, ওঝালী করে পিত্তের পাথর অপসারণ করা সম্ভব নয়। এটা ভাওতাবাজি, প্রতারণা ও ঠকবাজি ছাড়া আর কিছুই নয়। ভুক্তভোগীরা এ বিষয় মাদারীপুর র্যাব ক্যাম্পে বিস্তারিত ইমেইল মাধ্যমে অবহিত করেছেন।