সরকারী প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা লুটপাট ও অসংখ্য অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগে অবশেষে ময়মনসিংহ সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসির) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ লক্ষিপুরে বদলি হয়েছেন। কিন্তু র্দীঘ সময় ধরেও রহস্যজনক কারণে ধামাচাপায় পড়ে আছে গিয়াস উদ্দিনের বিরুদ্ধে দুটি অভিযোগের তদন্ত কার্যক্রম। এনিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির ভেতরে-বাইরে।
বদলি খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ। তিনি জানান, গতকাল আমি বদলি হয়ে লক্ষিপুরে যোগদান করেছি।
সূত্র জানায়, ময়মনসিংহের সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ দায়িত্বে আসেন ২০১৭ সালের ১৪ জানুয়ারি। দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম-দূর্নীতির অভিযোগ উঠতে থাকে। এর আগে তিনি ২০০৮ সাল হতে ২০১৪ পর্যন্ত সিলেট কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের প্রকল্প খাতে ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে দ্বায়িত্বে ছিলেন। পরবর্তীতে ওই প্রকল্পটি রাজস্ব খাতের অন্তভূক্ত হওয়ায় ২০১৪ সালে তিনি সংযুক্তিতে শেরপুর টিটিসিতে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন। অভিযোগ রয়েছে, শেরপুর টিটিসিতে কর্মরত থাকাকালীন সময়ে অসাদাচরনের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানের নারী ইনস্ট্রাক্টর শারমীন সুলতানা সুমি লিখিত অভিযোগ করেন। বর্তমানে ওই অভিযোগটির তদন্ত কার্যক্রম জনশক্তি ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালকের দফতরে রহস্যজনক কারণে ফাইলবন্দি রয়েছে।
ময়মনসিংহ টিটিসির সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, টিটিসির অভ্যন্তরে সুবিশাল আয়তনের পুকুরটি বর্তমান লীজ মূল্য ৬ থেকে ৭ লাখ টাকা হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গিয়াস উদ্দিন নিজ নামে মাত্র ৭৫ হাজার টাকায় ৩ বছরের জন্য লীজ নিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এ ঘটনায় এক পর্যায়ে বির্তক সৃষ্টি হওয়ার কারণে অবশেষে ওই লিজ বাতিল করা হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, বিগত সাড়ে ৩ বছরে প্রায় ২ লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা ম্যানেজমেন্ট সম্মানী বাবদ খরচ দেখানো হয়েছে। অথচ ওই খাতে কাউকে কোনো টাকা দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। একই ভাবে বিগত সাড়ে ৩ বছওে প্রতিষ্ঠানের নোটবুক ও কলম কেনার নামে ৮ লক্ষ ৭ হাজার ৬শ টাকা, রিসোর্স পার্সনের নামে ১০ লাখ ৮৬ হাজার ৮শ টাকা, সহযোগী স্টাফ সম্মানীর নামে ২ লাখ ৬৯ হাজার ২শ টাকা, আনুষাঙ্গিক খাতে ২ লাখ ১৫ হাজার ৩শ ৬০ টাকা ব্যয় দেখিয়ে ভুয়া বিল-ভাইচারে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। এছাড়াও গিয়াস উদ্দিন ক্ষমতা অপব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানের প্রায় ২০ লাখ টাকা বাজার মূল্যের ১৫৯টি বিশাল বিশাল গাছ নিজের চাচাকে ঠিকাদার বানিয়ে মাত্র ৪৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতিষ্ঠানের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, বিগত অর্থ বছরে প্রতিষ্ঠানের গেস্ট হাউস, উপাধাক্ষ্য ও অধ্যক্ষের বাসভবন মেরামতের নামে গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বরত ইঞ্জিনিয়ার ও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের যোগসাজশে গিয়াস উদ্দিন ৪০ লাখ টাকার প্রায় পুরোটাই আত্মসাৎ করেছেন। এছাড়াও বিদেশগামী অসহায় সাধারণ মহিলা প্রশিক্ষণার্থীদের খাবারের জন্য দৈনিক জনপ্রতি ১শ’ টাকা হারে জমা নিলেও তার সিংহভাগ ব্যয় না করে অধ্যক্ষের যোগসাজসে ভা-বাটোয়ায় আত্মসাৎ করা হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে। আর এসব অনিয়মের অধ্যক্ষের সহযোগিতার জন্য ছিলেন প্রতিষ্ঠানের কম্পিউটার ট্রেডের দুই জন প্রশিক্ষক ও ড্রাইভিং শাখার একজন চীফ ইনস্ট্রাক্টর।
ময়মনসিংহ সরকারি কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র (টিটিসির) ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বেশির ভাগ অভিযোগ স্বীকার করে বলেন, আমার নামের পুকুর লীজ বাতিল হয়েছে এবং শেরপুরের নারী ইনস্ট্রাক্টরের অভিযোগটি বর্তমানে মহাপরিচালক ও যুগ্ন সচিব আফরোজা বেগমের তদন্তধীন আছে। আর ১৫৯টি গাছ সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে মেসার্স তানভীর এন্টারপ্রাইজের নিকট ৪৮ হাজার টাকায় গাছগুলি বিক্রি করা হয়েছে। তবে নিয়ম থাকলেও এনিয়ে পত্রিকায় কোন দরপত্রের আহব্বান করা হয়নি বলেও তিনি স্বীকার করেন।
এছাড়াও মসজিদের উন্নয়ন স্বার্থে শিক্ষাথীদের নিকট হতে টাকা নেওয়ার অভিযোগ স্বীকার করলেও বিদেগামীদের প্রশিক্ষন ভাতা আত্মসাৎ অন্যন্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বিশাল প্রতিষ্টান পরিচালনা করতে গিয়ে সবাইকে খুশি রাখা সম্ভব নয়।
তবে এসব বিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষন ব্যুরোর মহাপরিচালক (ডিজি) মো: শামসুল আলমের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগযোগ করা হলে কল রিসিভ করেন হেল্পডেক্সের ডিউটরত আইরিন নামের একজন। এ সময় ডিজির সাথে সাংবাদিক পরিচয়ে কথা বলতে চাইলে তিনি সহযোগীতায় অপারগতা প্রকাশ করেন।
এবিষয়ে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সচিব ড. আহমেদ মনিরুস সালেহীন বলেন, ব্যস্ত আছি। এখন কথা বলতে পারব না।