প্রকাশ: রোববার, ১০ জানুয়ারি, ২০২১, ১১:২৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
নারীরা কাজী হতে পারবেন না: পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ
বাংলাদেশের সামাজিক ও বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবেন না মর্মে নির্দেশনা দিয়ে পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছেন হাইকোর্ট।
দিনাজপুরের এক নারী রেজিস্ট্রার প্রার্থীর রিট খারিজ করে বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় প্রকাশ করেন। গত বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি এই রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
রিটকারীর আইনজীবী মো. হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, আদালতের প্রকাশিত রায়টির পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে- নারীরা মাসের একটি নির্দিষ্ট সময় ‘ফিজিক্যাল ডিসকোয়ালিফেশনে’ থাকেন। সেক্ষেত্রে মুসলিম বিবাহ হচ্ছে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং আমাদের দেশে বেশিরভাগ বিয়ের অনুষ্ঠান মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ওই সময়ে নারীরা মসজিদে প্রবেশ করতে পারেন না এবং তারা নামাজও পড়তে পারেন না। সুতরাং বিয়ে যেহেতু একটা ধর্মীয় অনুষ্ঠান, সেহেতু এই বাস্তবতার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে নারীদের দিয়ে নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন সম্ভব না। আদালত এই পর্যবেক্ষণ দিয়ে এ সংক্রান্ত রিটের ওপর জারি করা রুল খারিজ করে দেন।ফলে নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার (কাজী) হতে পারবেন না।
এ ব্যাপারে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এসকে সাইফুজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে বলেছেন- একজন নারী একজন মুসলিম ম্যারেজ রেজিস্ট্রার হতে হলে কিছু কিছু কার্যক্রম করতে হয়। নারী হিসেবে সব জায়গায় যেতে পারবেন কিনা। রাত-বিরাতে বিয়ের অনুষ্ঠান হতে পারে। সেখানে যেতে পারবেন কিনা। মুসলিম নিকাহ রেজিস্ট্রারদের কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। কিন্তু প্রাকৃতিকভাবে নারীদের প্রত্যেক মাসে একটি বিশেষ সময় আসে, যে সময়টাতে ধর্মীয়ভাবেই নারীরা মসজিদেও যেতে পারেন না। আবার নামাজও পড়তে পারেন না। এ সময় যদি কারো বিয়ের অনুষ্ঠান হয়, সেখানে তো কোনো নারী যেতে পারবে না। তাই পাবলিক অফিসের নারীদের অন্যান্য কাজের থেকে নিকাহ রেজিস্ট্রারের কার্যক্রমটি একেবারেই আলাদা।
দেশের প্রধানমন্ত্রী নারী, নারীরা বিমানের পাইলট, সশস্ত্র বাহিনীতে কাজ করছেন- তাহলে কেন নারীরা নিকাহ রেজিস্ট্রার হতে পারবেন না? এমন প্রশ্ন তুলে রিটকারীর আরেক আইনজীবী ফাউন্ডেশন ফর ল’ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ফাওজিয়া করিম গণমাধ্যমকে বলেন, আমরা হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবো।
২০১৪ সালে দিনাজপুরের ফুলবাড়িয়ার পৌরসভার ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে তিনজন নারীর নাম প্রস্তাব করে উপদেষ্টা কমিটি। তিন সদস্যের ওই প্যানেলের বিষয়টি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এরপর ওই বছরের ১৬ জুন আইন মন্ত্রণালয় ‘বাংলাদেশের বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে নারীদের দ্বারা নিকাহ রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়’- মর্মে চিঠি দিয়ে তিন সদস্যের প্যানেল বাতিল করে দেয়।
পরে আইন মন্ত্রণালয়ের ওই সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন নিকাহ রেজিস্ট্রারের প্যানেলের এক নম্বরে থাকা আয়েশা সিদ্দিকা নামের এক নারী। সেই রিটের শুনানি নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের ওই চিঠি কেন বাতিল করা হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। দীর্ঘ শুনানি শেষে জারি করা রুলটি খারিজ করে ২০২০ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করেন বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী ও বিচারপতি কাজী জিনাত হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।