'অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের ক্ষতি মোকাবেলায় সমন্বিত নীতিমালা করা হবে'
শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেছেন, করোনায় ক্ষতিগ্রস্থ কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তাদের (সিএমএসএমই) ক্ষতি মোকাবেলায় সমন্বিত একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হবে।
এ নীতিমালার আলোকে সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে উল্লেখ করে তিনি এ নীতিমালা প্রণয়নে বেসরকারিখাত ও এ সংক্রান্ত থিংক- ট্যাংক’কে সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহণের উদাত্ত্ব আহবান জানিয়েছেন।
বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীতে অনুষ্ঠিত ‘করোনা পরবর্তী কুটির, অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের অবস্থা এবং প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকরীতা’ শীর্ষক এক ভার্চ্যূয়াল নীতি-সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এ আহবান জানান তিনি।
সিটিজেন্স প্লাটফর্ম ফর এসডিজিস, বাংলাদেশ এবং বিজনেস ইনিসিয়েটিভ লিডিং ডেভলপমেন্ট যৌথভাবে এ ভার্চ্যূয়াল নীতি-সংলাপের আয়োজন করে।
এই সংলাপে স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তারা শিল্পখাতে করোনার ক্ষতি মোকাবেলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের কার্যকর বাস্তবায়নে জরুরিভিত্তিতে সমন্বিত একটি ডাটাবেজ গড়ে তোলারও আহবান জানান।
তারা বলেন, ইলেক্ট্রনিক প্রক্রিয়ায় ছাড়কৃত ঋণের তথ্য সংযুক্ত করে এ ডাটাবেজ সমৃদ্ধ করা সম্ভব। এর পাশাপাশি বক্তারা কুটির শিল্প, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের (সিএমএসএমই) জন্য সর্বজন গ্রহণযোগ্য একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ এবং এখাতে প্রণোদনার অর্থ ছাড়ের ক্ষেত্রে কো-লেটারেলের বাধ্যবাধকতা রদ করে দ্রুত প্রজ্ঞাপন জারি এখন সময়ের দাবি।
সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের সঞ্চালনায় এ নীতি-সংলাপে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বিল্ডের চেয়ারপারসন আবুল কাশেম খান। অনুষ্ঠানে সিপিডি’র সম্মানিত ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, এমসিসিআই’র সাবেক সভাপতি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, চিটাগাং স্টক এক্সচেঞ্জের সভাপতি সৈয়দ আসিফ ইব্রাহীম, অধ্যাপক ড. মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, বগুড়ার হালকা প্রকৌশল উদ্যোক্তা হারুনুর রশিদ, নারী উদ্যোক্তা হুমায়রা চৌধুরী, রংপুর উইম্যান্স চেম্বারের সভাপতি আনোয়ারা ফেরদৌসি, আইটি উদ্যোক্তা সৈয়দ আলমাস কবির, ব্র্যাক ব্যাংকের এসএমই বিভাগের প্রধান সৈয়দ আব্দুল মোমেনসহ কুটির, অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উদ্যোক্তারা বক্তৃতা করেন। আলোচনায় অংশ নেন।
বক্তারা বলেন, দেশের প্রায় ৭৮ লাখ কুটির, অতিক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (সিএমএসএমই) রয়েছে, যার ৯৯ শতাংশই গড়ে উঠেছে বেসরকারিখাতে। এসব শিল্প কারখানা জিডিপিতে ২৫ শতাংশ, রপ্তানিতে ৮০ শতাংশ এবং কর্মসংস্থানে প্রায় ৫০ শতাংশ অবদান রাখছে।
তারা বলেন, করোনার প্রভাবে বাংলাদেশের সিএমএসএমই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এ খাতের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন প্যাকেজের আওতায় ৫৯ হাজার ২৯২ কোটি টাকা আর্থিক প্রণোদনা ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ১২০ কোটি টাকা ছাড় করা হয়েছে। তাছাড়া, প্রণোদনার ৯৪ শতাংশই ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ছাড় করায় নানাবিধ জটিলতার কারণে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ উদ্যোক্তারা সরকারি সহযোগিতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বক্তারা ত প্রণোদনার অর্থ দ্রুত ছাড়ের জন্য ব্যাংকিং নীতিমালা সংস্কারেরও দাবি জানান।
বক্তারা বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও তাদেরকে ব্যাংকিং কার্যক্রমের আওতায় আনার সুযোগ নেই। জাতীয় অর্থনীতি চাঙ্গা করতে বিকল্প উপায়ে ক্ষতিগ্রস্থ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। তারা সিএমএসএমই উদ্যোক্তাদের টিকিয়ে রাখতে ভ্যাট ও ট্যাক্সে ছাড় প্রদানের পাশাপাশি বাড়িভাড়া, ইউটিলিটি বিলের একটি অংশ ঘোষিত প্রণোদনা থেকে বহন করারও আহবান জানান।
বক্তারা ব্যাংকগুলোকে সম্পদভিত্তিক অর্থায়নের পরিবর্তে তারল্যভিত্তিক অর্থায়ন, ভ্যাট ও ট্যাক্স আদায় ও অডিট প্রক্রিয়া সহজীকরণ এবং বিসিক ও এসএমই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে উদ্যোক্তা-বান্ধব ঋণ কর্মসূচি গ্রহণের পরামর্শ দেন।
স্বার্থ-সংশ্লিষ্ট উদ্যোক্তাদের বক্তব্য প্রসঙ্গে শিল্পমন্ত্রী বলেন, কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের চাকা সচল রেখে জাতীয় অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের শুরুতেই বিশাল প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছেন।
তিনি এই ঘোষণার কার্যকর বাস্তবায়নে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের পরামর্শ দেন।
নূরুল মজিদ মাহমুদ বিদ্যমান করোনা পরিস্থিতিতে কো-লেটারেলের বাধ্যবাধকতা তুলে দিয়ে সিএমএসএমইখাতের উদ্যোক্তাদের সক্ষমতা বিবেচনায় প্রণোদনার অর্থ মঞ্জুরের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহবান জানান।
কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য সমন্বিত একটি সংজ্ঞা নির্ধারণ করার দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক এ কথা উল্লেখ করে শিল্পমন্ত্রী বলেন, এসএমই ফাউন্ডেশন এ ধরণের একটি সমন্বিত ডাটাবেজ তৈরি করবে। এর মাধ্যমে দেশে প্রকৃত শিল্প উদ্যোক্তার সংখ্যা নির্ধারণ এবং প্রণোদনার অর্থ ছাড় সহজ হবে। তবে, কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র শিল্পের জন্য সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ও বিশেষ সহায়তা নিশ্চিত করতে একটি আলাদা সংজ্ঞা নির্ধারণ ফলপ্রসূ হতে পারে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। বাসস